শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন

মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই প্রবীর মিত্রের

ফোরাম প্রতিবেদক / ৮৭৬ জন দেখেছেন
আপডেট : অক্টোবর ১৮, ২০১৯
নিজের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই প্রবীর মিত্রের
দর্শক ফোরামের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন


বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র। সেই ৬০’র দশক থেকে অভিনয় জগতে তার নিয়মিত পদচারণ। ৫০ বছরের বেশি সময়ে ৩০০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। জীবনের এই প্রান্তে এসে বেশ অসুস্থ তিনি। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। হাঁটুর ব্যথায় জন্য লাঠিতে ভর দিয়ে চলাচল করতে হয়। চার দেয়ালের মাঝে পত্রিকা পড়ে, বই পড়ে, টিভি দেখে সময় কাটে তার। সম্প্রতি এমন কথা বলেছেন বাংলার মানুষের প্রিয় এই অভিনেতা। বলেছেন জীবনের অনেক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা।

অভিনেতার কাছে সুখের সংজ্ঞাটা বেশ ছোট। অল্পতেই সুখী থাকতে চেয়েছেন তিনি। জীবন চলার পথে সামান্য যা পেয়েছেন তাই নিয়ে সুখী হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ব্যক্তি জীবনে চাওয়া পাওয়া কম ছিল, অল্পতে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছি, তাতেই সুখী হয়েছি।

চার সন্তানের জনক প্রবীর মিত্র। প্রতিটি ছেলে মেয়েই মাস্টার্স পাস করেছেন। সবাই ভালোভাবে জীবনযাপন করছে। এ প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও তাদের মানুষ হবার পেছনে শতভাগ কৃতিত্ব স্ত্রী অজন্তা মিত্রর। কারণ শুটিং এর ব্যস্ততার জন্য কোনোদিনই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার প্রতি নজর দেবার সময় পাইনি। স্ত্রীর কথা ছিল সবাইকে মাস্টার্স শেষ করতে হবে। আর তিনি তাই করেছেন। এর জন্য আমি গর্ববোধ করি।

প্রবীর মিত্র প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। তবে তার স্ত্রী অজন্তা মুসলিম ধর্মের অনুসারী। এ বিষয়ে পরিবার থেকে কোনও বাধা পেয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেতা বলেন, পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে। অজন্তা ছেলে-মেয়েদের মুসলিম রীতিতেই মানুষ করেছে। এই বিষয়ে আমার কোনও আপত্তি ছিল না।

অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে অভিনেতা বলেন, স্টেজে অনেকদিন অভিনয় করেছি। বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করেছি। দেখা যেত একটা চরিত্রের অভিনেতা উপস্থিত হননি, তখন আমি সেই চরিত্রে কাজ করেছি, প্রক্সি দিয়েছি। এতে করে পরবর্তী জীবনে অনেকগুলো চরিত্রে অভিনয় করার ট্রেন্ড ওখান থেকে রপ্ত করতে পেরেছি।

তরুণ প্রজন্মের অভিনয়ের কথা উল্লেখ করে অভিনেতা বলেন, এখন অভিনেতাদের মধ্যে সিরিয়াসনেসের অভাব। আন্তরিকতার অভাব। যাই কিছু করি সেটা আন্তরিকভাবে করতে হবে, যেন মানুষের হৃদয়ে জায়গা পায় এমনভাবে কাজ করা উচিৎ।

জনপ্রিয়তার মুহূর্ত স্মৃতি চারণ করে অভিনেতা বলেন, এক সময় অটোগ্রাফ দিতাম। ব্যস্ততা থাকলে পরে আসতে বলতাম। তাতে ভক্তরা খুশি হতো। সেগুলো তারা সযত্নে রেখে দিতো।

এ অভিনেতা এখন বার্ধক্য নিয়ে সময় পার করছেন। বার্ধক্যের প্রস্তুতি বিষয়ে তিনি বলেন, বার্ধক্য তো আপনা-আপনি আসে। এক সময় শরীর অকেজো হয়ে যায়। মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে যায়, মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। এজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

সহকর্মীদের দেখাসাক্ষাৎ পান না অভিনেতা। সে প্রসঙ্গে বলেন, অনেক কিছুই খারাপ লাগে। আগে সবার সঙ্গে দেখা হতো কথা হতো। এখন মাসের পর মাস অনেকের সঙ্গে দেখা হয় না, কথা হয় না। কখনও কখনও টেলিফোনে কথা হয়। এটা কষ্ট দেয়, পীড়া দেয়। আমারও দেখতে ইচ্ছে হয়, তাদেরও দেখতে ইচ্ছে হয়, তবে হয়ে ওঠে না। যাই হোক, সবকিছু মেনে নিতে হয়।

নবীনদের উদ্দেশে অভিনেতা বলেন, যাই করবে খুব সিরিয়াসলি করবে। হুট করে আসলাম, তারপর হুট করে চলে গেলাম এমন করলে হবে না। কাজকে সিরিয়াসলি নিতে হবে, চিন্তাভাবনা করতে হবে। তাড়াহুড়ো করলে হবে না।

শেষ জীবনে কাদের বেশি মনে পড়ে এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেতা বলেন, স্ত্রী অজন্তা মিত্র ও ছেলে আকাশের মৃত্যু প্রায়ই কষ্ট দেয়। বাড়িতে একা থাকলে তাদের কথা বেশ মনে পড়ে। আকাশ হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ছেলেটা লেখাপড়ায়, দেখতে ও কথায় ছিল খুবই ভালো। আমি ওর জন্য সব সময় দোয়া করি ও যেনো ভালো থাকে।

প্রবীর মিত্র সেগুনবাগিচায় বড় ছেলের সঙ্গে থাকেন। এক সময় যে পৈত্রিক বাড়ি ছিল সে কথা ভুলতে পারেন না। পূর্বপুরুষ জমিদার হওয়ায় অনেক বড় বাড়িতে তার শৈশব কেটেছে। কিন্তু এখন এই ছোট্ট ভাড়া বাসায় নিজেকেও ছোট মনে হয় তার। এই শহরে নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তার। কষ্ট হলেও অপেক্ষায় আছেন প্রশান্তির।-গাজী আনিস

The short URL of the present article is: https://tvforumbd.com/84cm


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

এ বিভাগের আরো খবর

২১ জুন-23 অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান