বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

হলিউডে ২০২২ পাঁচ সিনেমার কিস্তিমাত

ফোরাম প্রতিবেদক / ১৮৫ জন দেখেছেন
আপডেট : জানুয়ারি ৪, ২০২৩
হলিউডে ২০২২ পাঁচ সিনেমার কিস্তিমাত
দর্শক ফোরামের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে বেশ কয়েক বছর ধরেই নাস্তানুবুদ হচ্ছে চিরাচরিত হলিউড। সেই করোনাকালের আগ থেকে শুরু। করোনার থাবায় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল প্রথাগত হলিউড। তবে ২০২২ সাল শেষ করে অবস্থান কিছুটা হলেও পুণরুদ্ধার করার স্বপ্ন দেখছে হলিউডের সিনেমা হলকেন্দ্রিক ব্যবসা। আর এর নেপথ্যে আছে মূলত তুলনামূলকভাবে ভালো ব্যবসা করা কয়েকটি সিনেমা।

এই তালিকায় প্রথমেই আসে টম ক্রুজের ছবি ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’। বিশ্বজুড়ে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যবসা করেছে ছবিটি। মূলত ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘টপ গান’ ছবিরই সিক্যুয়েল এটি। টনি স্কটের সেই ছবিটি তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল এবং বতর্মানে তা ক্লাসিকের মর্যাদায় আসীন। এত বছর পর ছবিটির সিক্যুয়েলে ফের পর্দায় হাজির হন টম ক্রুজ। এবং এসেই বক্স অফিস জয় করে নিলেন তিনি। গেল বছরের সবচেয়ে আলোচিত হলিউডি ছবি হিসেবে ম্যাভেরিকের এগিয়ে থাকার মূল কারণ হলো, একই সঙ্গে সাধারণ দর্শক ও সমালোচকের মন জিতে নিয়েছে ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’। প্রজন্মের পরিবর্তন হয়েছে বটে, সেটি দর্শক ও সিনেমার কুশীলব – দুই ক্ষেত্রেই। তবে তাতে বক্স অফিস মাতানো থেমে থাকেনি। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবিটির প্রযোজনাতেও রয়েছেন টম ক্রুজ। করোনা মহামারির কারণে ছবিটির মুক্তি কয়েক দফা পিছিয়ে গিয়েছিল। এরপর পরিবেশনা সংস্থা প্যারামাউন্ট পিকচার্স গত ২৭ মে ছবিটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসে।

নতুন টপ গানের পরিচালক জোসেফ কোজিনস্কি। এর আগে টম ক্রুজের সঙ্গে সাই-ফাই ছবি ‘অবলিভিয়ন’-এ কাজ করেছিলেন তিনি। এবার টম ক্রুজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবিটি নির্মাণ করলেন জোসেফ। ম্যাভেরিকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি যেমন আগের ছবিটির নস্টালজিয়া ফিরিয়ে আনে দুর্দান্তভাবে, তেমনি শুধু অ্যাকশন মুভি হিসেবে অসাধারণ। আবেগ আর অ্যাড্রেনালিনের অপূর্ব মেলবন্ধনে ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’ তাই অবিসংবাদিতভাবেই বিশবাইশের সেরা হলিউডি ছবি।

গেল বছর বিশ্বজুড়ে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা আরেক ছবিও সিক্যুয়েল। প্রবল জনপ্রিয় জুরাসিক পার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজির ‘জুরাসিক পার্ক: ডমিনিয়ন’। ছবিটি বুঝিয়ে দিয়েছে যে জুরাসিক পার্কের ডাইনোসোরদের দিন ফুরিয়ে যায়নি। বরং তাদের গর্জনে এখনও কাঁপন লাগে বক্স অফিসে। যদিও এবারের ছবিটির গল্প, নির্মাণ ও অভিনয়শিল্পীদের নৈপুণ্য নিয়ে সমালোচক মহলে নিন্দার ঝাঁজ আছে। তার পরও বছরের ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় একেবারে ওপরের দিকেই আছে ‘জুরাসিক পার্ক: ডমিনিয়ন’।

এর পরেই আসে মারভেলের সুপারহিরোদের তেলেসমাতি। ডক্টর স্ট্রেঞ্জের নতুন অভিযান বক্স অফিস থেকে আয় করে নিয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অব ম্যাডনেস’ সারা বিশ্বে আয় করেছে ৯৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ভরপুর ভিএফএক্সে ছবিটি হয়ে ওঠে বেশ উপভোগ্য। সেই সঙ্গে ছিল একদা অ্যাভেঞ্জার্স দলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা স্কারলেট উইচ ও ডক্টর স্ট্রেঞ্জের মুখোমুখি লড়াই। বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন ডক্টর স্ট্রেঞ্জ চরিত্রটিকে। ওয়েবসিরিজ ‘ওয়ান্ডাভিশন’-এ সৃষ্টি হওয়া গল্পের লেজ পাওয়া গেছে বড় পর্দার এই ছবিতেও। আর দুই মাধ্যমেই সন্তানহারা স্কারলেট উইচের ভূমিকায় দিব্যি মানিয়ে গেছেন এলিজাবেথ ওলসেন।

অন্যদিকে অ্যানিমেশন ফিল্ম ‘মিনিয়নস: দ্য রাইজ অব গ্রু’ পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করেছে সুপারহিরোদের ভিড়েও। সমালোচকেরা অবশ্য বলছেন, মিনিয়নস ফ্র্যাঞ্জাইজির অন্যান্য ছবিগুলোর তুলনায় এবারেরটি খুব একটা সুবিধার হয়নি। তবে তার পরও বক্স অফিসে প্রায় ৯৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে ছবিটি।

হলিউডের জন্য বছরের সেরা চমক হয়তো অপেক্ষা করছিল ডিসেম্বরে। জেমস ক্যামেরন পরিচালিত ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ বছরের শেষটা রাঙিয়ে হলিউডের জন্য নিয়ে এসেছে বিশাল সুখবর। এরই মধ্যে সারা বিশ্বে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে ফেলেছে ছবিটি।

গত ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা অ্যাভাটারের দ্বিতীয় এই সিক্যুয়েল। দিন যতই গড়াচ্ছে, একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে জেমস ক্যামেরনের এই ড্রিম প্রজেক্ট। দ্রুততম সময়ে বিলিয়ন ডলার আয়ের আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে ছবিটি। মাত্র ১২ দিনেই এই ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছে ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি স্টুডিওর ব্যানারে নির্মিত চলচ্চিত্রটির বাজেট ছিল ৪৬ কোটি ডলার। অভিনয়ে আছেন স্যাম ওর্থিংটন, জো সালডানা, কেট উইন্সলেট প্রমুখেরা। শুধু টিকিট বিক্রির আয়েই বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেওয়া ছবিটি কতগুলো রেকর্ড নতুন করে গড়বে, সেটিই এখন আলোচনার তুঙ্গে।

এই সিনেমাগুলোর বাইরেও গেল বছরে আলোচিত ছিল ‘ব্ল্যাক প্যান্থার: ওয়াকান্ডা ফরএভার’, ‘দ্য ব্যাটম্যান’, ‘থর: লাভ অ্যান্ড থান্ডার’, ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস: দ্য সিক্রেটস অব ডাম্বলডর’ প্রভৃতি। প্রয়াত চ্যাডউইক বোজম্যানের স্মরণে নির্মিত ব্ল্যাক প্যান্থারের এবারের সিক্যুয়েল মুক্তির প্রথম দিনেই ৪ হাজার ৩৯৬টি প্রেক্ষাগৃহ থেকে তুলে ফেলে ৮ কোটি ডলারের বেশি। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে ছবিটি।

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বাজারের গেল বছরের অন্যতম চলচ্চিত্র ছিল ‘দ্য ব্যাটম্যান’। দর্শক ও সমালোচক – উভয় পক্ষই ছবিটি সাদরে গ্রহণ করেছেন। ব্যাটম্যান চরিত্রে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেই নন্দিত হয়েছেন হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা টোয়াইলাইটখ্যাত রবার্ট প্যাটিনসন। কেউ কেউ বলছেন, এ যাবতকালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাটম্যান পাওয়া গেছে ম্যাট রিভস পরিচালিত ছবিটিতে।

মারভেলের আরেক ছবি ‘থর: লাভ অ্যান্ড থান্ডার’। ক্রিস হেমসওয়ার্থ এবারও থর হিসেবে দর্শকদের সামনে হাজির ছিলেন। তবে এবারের সিক্যুয়েলটি নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে বেশ। নিন্দুকেরা বলছেন, কমেডির সার্থক চিত্রায়ণ হয়নি এবং থরের পারফরম্যান্সও ছিল নিম্নগামী। অবশ্য থরের ব্র্যান্ড বিক্রি করেও মারভেলের ব্যবসা হয়েছে ভালোই, বিশ্বব্যাপী ৭৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় হয়েছে ছবিটির।

সব মিলিয়ে বলাই যায় যে, বিশবাইশ মোটের ওপর ভালোই গেছে হলিউডের। গেল বছরে বক্স অফিসে পাওয়া আর্থিক সফলতা খুব স্বাভাবিকভাবেই হলিউডকে নিজেদের ঘরানার বড় বাজেটের ছবি বানাতে জ্বালানি জোগাবে। এবার দেখার পালা, ২০২৩ কেমন যায় হলিউডের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

এ বিভাগের আরো খবর

২১ জুন-23 অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান