অভিনয়, লেখালেখি, চলচ্চিত্র নির্মাণ—সবখানেই ছিল তাঁর পদচারণা। তবে সকল পরিচয় ছাপিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অভিনয়শিল্পী হিসেবেই হয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। তিনি এটিএম শামসুজ্জামান। অভিনয়গুণে একাধিক প্রজন্মের কাছে যিনি অনুপ্রেরণার বাতিঘর। পর্দায় তিনি কখনো হাসিয়েছেন, কখনো কাঁদিয়েছেন, আবার কখনো ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের।
ক্যারিয়ারের নানা সময়ে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করলেও খলচরিত্রে এটিএম ছিলেন অনবদ্য। এর সর্বশেষ উদাহরণ রেদওয়ান রনি পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘চোরাবালি’। যেখানে অপরাধ জগতের গডফাদার ওসমান গনির ‘বড়ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। মন্দ চরিত্রে তিনি এমনভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতেন যে, অভিনয় নাকি বাস্তব—তা আঁচ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো দর্শকদের।
নানা ঘটনায় মোড়া এটিএম শামসুজ্জামানের জীবন কাহিনী। চলচ্চিত্র পাড়ায় একটা ঘটনা প্রচলিত রয়েছে যে, একদিন জুম্মার দিনে গোসল করে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখন এক লোক এটিএমকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’ এটিএম বললেন, ‘মসজিদে যাচ্ছি।’ লোকটি বলল, ‘জুম্মার নামাজ পরে আপনার লাভ কী? জীবনে এতো আকাম করেছেন বুঝতে পারছেন না? আপনি একটা বাজে লোক!’
সত্যি বলতে, চলচ্চিত্রের পর্দায় খলচরিত্রে অভিনয় করলেও ব্যক্তিজীবনে এটিএম ছিলেন খুবই ধার্মিক। এক সাক্ষাৎকারে অভিনয় জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেছিলেন, ‘সিনেমায় আমাকে দেখে লোকজন খারাপ ভেবেছে, এতেই আমার আনন্দ।’
আজ এই গুণী অভিনেতার জন্মবার্ষিকী। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে তাঁর জন্ম। পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে।
১৯৬১ সালে নির্মাতা উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন এটিএম শামসুজ্জামান। পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালে, তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘নয়া জিন্দগানী’; যদিও তা মুক্তি পায়নি। প্রথমবার তাঁকে পর্দায় দেখা যায় ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ সিনেমায়। এক খবরের কাগজ বিক্রেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।
১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের নয়নমণি সিনেমায় প্রথম খল চরিত্রে দেখা যায় এ টি এম শামসুজ্জামানকে। সফল ছিলেন চিত্রনাট্যকার ও কাহিনীকার হিসেবেও। লিখেছেন শতাধিক সিনেমার চিত্রনাট্য। টিভি নাটকেও এটিএম শামসুজ্জামানের অবস্থান প্রথম সারিতে।
প্রায় চার শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। তার প্রাপ্তিও কম নয়, শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একবার, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে একবার পুরস্কার পেয়েছেন।এছাড়াও পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা।
তাঁর অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘গেরিলা’, ‘চোরাবালি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
You must be logged in to post a comment.