ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। এ বছর চলচ্চিত্রেও অভিষেক হয়েছে তাঁর। গত রোজার ঈদে মুক্তি পায় গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত অভিনেত্রীর প্রথম চলচ্চিত্র ‘কাজলরেখা’। পাশাপাশি ওটিটিতে ‘মায়া শালিক’, ‘ইন্টার্নশিপ’ ও ‘প্রচলিত’র মতো ওয়েব কনটেন্টেও দর্শকের নজর কেড়েছেন তিনি। অন্যদিকে, এ অভিনেত্রীর প্রিয়তম অভিনেতা ম্যাথু পেরি। যিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু শোকাচ্ছন্ন করেছে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অনুরাগীদের। ম্যাথু পেরির মৃত্যু ভীষণ নাড়া দিয়েছে সাদিয়াকেও। এদিন কোনোভাবেই কান্না ধরে রাখতে পারেননি তিনি। পেরির সেই শূন্যতা আজও তাঁকে পোড়ায়।
গত শতাব্দীর নয়ের দশকে প্রচারিত ‘ফ্রেন্ডস’ সিরিজের জন্যই সাদিয়ার হৃদয়ে জায়গা করে নেন ম্যাথু পেরি। এতে অভিনেতার নাম ‘চ্যান্ডলার বিং’।
চরিত্রটি মারাত্মকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে সাদিয়ার মনে। কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা শোনা যাক অভিনেত্রীর মুখেই—‘আমার প্রতিদিন এ রকম একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল যে, ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেন্ডস দেখতাম। ফ্রেন্ডস দেখলে মনটা ভালো হয়ে যেত। এত দারুণ একটি সিরিজ, যেখানে বন্ধু-বান্ধব, ভালোবাসা, যত্ন, পরিবার—এই ব্যাপারগুলো খুব অসাধারণ লাগত।’
ফ্রেন্ডস-এ চ্যান্ডলার বিং চরিত্রে ম্যাথু পেরির সংবেদনশীল কৌতুকাভিনয় মুগ্ধ করেছে অনুরাগীদের। বিশেষত মনিকা ও জোয়ির সঙ্গে তার সম্পর্কের সমীকরণ ভোলার মতো নয়। বলতে গেলে, বন্ধুত্ব ও প্রেম যেখানে মিশে রয়েছে এক মোহনায়।
ম্যাথু পেরিকে এতটা ভালোবাসার রহস্য জানতে চাইলে সাদিয়া বললেন, ‘চ্যান্ডলার বিংয়ের মতো ছেলেদের মেয়েরা খুব পছন্দ করে। ওকে আমার ভালোলাগার অন্যতম কারণ, ও অনেক হিউমেরাস (রসিক)। ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের ছেলে আমারও খুব পছন্দ। ও অনেক ফানি (মজার মানুষ)। একইসঙ্গে তার একটা স্থায়ী চাকরি রয়েছে, যে ছেলেটা একদম ম্যাচিউরড, অনেক কেয়ারিং; বলা যায় একদম হাজব্যান্ডের মতো ব্যাপার। চ্যান্ডলারকে আমি ধরে নিয়েছি, ও আমার জীবনের কেউ একজন।’
সিরিজটির কাহিনি এগোয় ৬ বন্ধুর জীবনকে ঘিরে। যেখানে বন্ধুত্ব, রোমান্স ও কর্মজীবনের নানা বিষয় উঠে এসেছে। গল্পে এই বন্ধুরা—চ্যান্ডলার, মনিকা, রস, র্যাচেল ও জোয়ি।
সাদিয়াকে তাঁর বান্ধবী-বন্ধুরাও মনিকার সঙ্গে তুলনা করেন। অভিনেত্রীর মতেও তা-ই। তিনি বলেন, ‘বাস্তবে আমি মনিকার মতো চরিত্রের। ও যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গোছানো থাকতে পছন্দ করে, রান্নাবান্না করতে পছন্দ করে, রান্নাবান্না করে সবাইকে খাওয়াতে পছন্দ করে; আমিও ঠিক তাই। মনিকা চাইত এমন একটা রিলেশনশিপ হবে, যার সঙ্গে তার বিয়ে হবে, সংসার হবে। মানে সবসময় ও সেটেল হতে চাইত। আমিও তা-ই। তারপর হঠাৎ করেই মনিকা ও চ্যান্ডলারের প্রেম হয়। ওরা আগে থেকেই খুব ভালো বন্ধু ছিল। বুঝতে পারে যে, ওরা দুজন-দুজনার জন্য পারফেক্ট। আমরা দর্শকরাও বুঝতে পারি যে, ওরা দুজনে-দুজনার জন্য পারফেক্ট।’
ফ্রেন্ডস সিরিজটির সঙ্গে অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে সাদিয়ার। তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা বিড়াল ছিল, ওর নাম মিও। এটা অনেকেই জানে যে, ও হারিয়ে গেছে। মিও হারিয়েছে প্রায় দুই বছর হবে। তো দেখা গেল, আমি আর মিও কম্বলের নিচে শুয়ে ল্যাপটপে ফ্রেন্ডস দেখছি। আমাদের এমন অনেক ছবি আছে। ফেসবুকে ক্যাপশন দিয়েছিলাম যে, ‘আই অ্যাম ওয়াচিং ফ্রেন্ডস উইথ মাই ফ্রেন্ড।’ এই ব্যাপারগুলো আমাকে খুব আবেগপ্রবণ করে। সব মিলিয়ে, ফ্রেন্ডস’র সঙ্গে আমার হৃদয়ের অন্যরকম এক সংযোগ তৈরি হয়। ফ্রেন্ডসকে আমার মনে হয় যে, আমারই বন্ধু তাঁরা।’
জানা যায়, ২০২০ সালের শেষদিকে ‘ফ্রেন্ডস’ দেখতে শুরু করেন সাদিয়া। আর ২০২২-এ এসে তা নিয়মিত দেখার এক সিরিজে পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, বন্ধুদেরও সিরিজটি দেখার কথা বলতেন অভিনেত্রী। তাঁর মতে, অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা, শিল্প নির্দেশক—সবারই এই সিরিজটি দেখা উচিত।
অন্যদিকে, অভিনেতার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার দিনটিও সাদিয়ার জন্য অপার্থিব। তিনি বলেন, ‘যখনই সুযোগ হয়, এ সিরিজ এখনও অল্প-স্বল্প দেখি। একদিন এ রকম ঘুম থেকে ওঠার পর ফ্রেন্ডস দেখছি, আর ভাবছি—ওদের (ফ্রেন্ডস অভিনয়শিল্পীরা) এখন বয়স হয়ে গেছে, তো এই ছয় বন্ধুর মধ্যে কে মারা যাবে সবার আগে? তখন ওদের কেমন লাগবে! হঠাৎ করে এমন এক চিন্তা এল মনের ভেতর। ধরেন, আজ দুপুরে এটা ভেবেছি, আর পরদিন গেল; এর পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি এই দুঃসংবাদ। সেদিন শুটিং ছিল না। ফেসবুকিং করছি… ইনস্টাগ্রামে আমি ফ্রেন্ডস’র পেজ ফলো করি। হঠাৎ দেখি ওরা সবাই চ্যান্ডলার বিং মানে ম্যাথু পেরির সাদা-কালো ছবি দিয়েছে। লিখেছে, ‘রেস্ট ইন পিস।’ ওই মুহূর্তটা আমার কাছে মনে হচ্চিল যে, মানে কী! কিছুই বুঝতে পারছি না! ওটা কেন লিখেছে ওরা! পরে আমি বিবিসিসহ সব জায়গায় সার্চ করি। লাইভ দেখা শুরু করি—ওর (ম্যাথু পেরি) বাসার সামনে সিলগালা, মানুষজন আসছে দেখতে, ওর বাবা-মা এলেন। মুহূর্তেই আমি পাগলের মতো হয়ে পড়ি। মনে হচ্ছে, আমার জীবনের কেউ একজন মারা গেছেন। ইচ্ছে করছিল, দৌড়ে তাঁর বাসার সামনে চলে যাই। ও আমার চ্যান্ডলার বিং। আমি আমার জীবনে এমন একজন চ্যান্ডলার বিং চাই। ও এ রকম একটা চরিত্র।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে এনবিসি-তে প্রচারে আসে ‘ফ্রেন্ডস’। সিটকম ঘরানার এই সিরিজে ম্যাথু পেরি ছাড়াও অভিনয় করেন লিসা কুড্রো, জেনিফার অ্যানিস্টন, কোর্টনি কক্স, ম্যাট লেব্ল্যাঙ্ক, ও ডেভিড শুইমার। মোট দশটি সিজনে প্রচারিত হয় এ সিরিজ। পরিচালনা করেছেন ডেভিড ক্রেন ও মার্থা কাফম্যান।
You must be logged in to post a comment.