প্রথমবারের মতো ভৈরবীর গীতরঙ্গ দলের পরিবেশনায় মঞ্চায়িত হলো নাটক ‘রাইকুঞ্জ’। ধামাইল গান ও নাচের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে এক নৃত্যনাট্য। নাম ‘রাইকুঞ্জ’। যেটি মঞ্চায়ন করেছে ভৈরবীর গীতরঙ্গ দল।
গত ১৪ মার্চ ইলিয়াস নবী ফয়সালের রচনা ও নির্দেশনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে এর নাটকটির মঞ্চায়ন হয়।
জানা গেছে, রাইকুঞ্জের মূল উপলক্ষ হচ্ছে বাংলার বিবাহরীতি। এটি একটি লোক আঙ্গিকের গল্প, যেই গল্পে বাংলার শ্রীহট্ট অঞ্চলের বিবাহ রীতিনীতি ও সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। রাইকুঞ্জ নৃত্যনাট্যতে উঠে এসেছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন, বিবাহরীতিনীতি, প্রেমাখ্যান, বাংলার উৎসব, বিরহ বন্দনার মতো বিষয়। ধামাইল নাচের ওপর নির্ভর করে তৈরি হলেও এতে গল্পের প্রয়োজনে সমসাময়িক বিভিন্ন নাচের ধারা তুলে ধরা হয়েছে।
রাইকুঞ্জ’র প্রথম মঞ্চায়নে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, গবেষক এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস। এছাড়া ভৈরবীর প্রতিষ্ঠাতা এবং কার্য নির্বাহী প্রধান ইলিয়াস নবী ফয়সাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীদুজ্জামান খান শাহী, ভৈরবীর কার্য নির্বাহী দলের সদস্যবৃন্দসহ পৃষ্ঠপোষকদের পক্ষে থেকে অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভৈরবীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীদুজ্জামান খান শাহী জানান, ভৈরবী একটি দেশীয় সংস্কৃতি গবেষণা এবং গীতরঙ্গ পরিবেশনা কেন্দ্র। মূলত তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে দেশের হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে ভৈরবী। এই প্রচেষ্টায় আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছে দেশের এবং এশিয়া মহাদেশের ১২০-এর অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরুণ শিক্ষার্থীরা। আমাদের গবেষণা এবং সেখান থেকে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি আমাদের গীতরঙ্গ পরিবেশনা দল।
প্রধান অতিথি জনাব গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ভৈরবী দেশীয় সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করছে। অনেকেই এই প্রচেষ্টা করেছেন তবে বিভিন্ন বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়ে পিছিয়ে গিয়েছে। ভৈরবী প্রায় ৩ বছর ধরে এই কার্যক্রম সাহসিকতার সঙ্গে করে আচ্ছে। আগামী দিনেও তারা এমন সুন্দর সুন্দর কাজ উপহার দিবে, সেই কামনা করছি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আহমেদ গিয়াস বলেন, তরুণ নির্মাতা ইলিয়াস নবী ফয়সালের রচনা ও নির্দেশনায় ভৈরবীর পরিবেশনা রাইকুঞ্জ দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে। নতুন শিল্পীদের নিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। রাইকুঞ্জর মঞ্চায়ন প্রতি মাসেই হোক। প্রতি মাসেই পূর্ণ হল নিয়ে মানুষ উপভোগ করতে চলে আসবে। এই বিষয়ে যেকোনো সহযোগিতায় আমরা পাশে আছি।
নাটক মঞ্চায়নের শেষে রাইকুঞ্জ নাটকের নির্মাতা এবং রচয়িতা ইলিয়াস নবী ফয়সাল বলেন, বাংলার এক অপরুপ লোকনৃত্য হচ্ছে ধামাইল। ধামাইল গান ও ধামাইল নাচ সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত একজাতীয় কাহিনি সংবলিত নৃত্য। যা এই অঞ্চলের লোকসাহিত্যের একটি অংশ। যেকোনো মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানেই এই গীত-নৃত্য পরিবেশন করে থাকে। এটি কাহিনিমূলক পরিবেশনা; অর্থ্যাৎ, এতে এক একটি বিষয় বা কাহিনি নিয়ে তার বিভিন্ন অংশ পর্যায়ক্রমে পরিবেশন করা হয়। ধামাইল নাচ এবং গানকে কেন্দ্র করে আমরা ভৈরবী একটি কর্মশালার আয়োজন করি। পরবর্তীতে সেই কর্মশালার রূপ দান করা হয় রাইকুঞ্জ নাটকে। আমাদের দলের সবাই তাদের সর্বচ্চো চেষ্টা করেছে আপনাদের সামনে একটি সুন্দর পরিবেশনা তুলে ধরার।
You must be logged in to post a comment.