শুরু হয়ে গেছে ধর্মঘট। লেখকদের ধর্মঘটে শুক্রবার (১৪ জুলাই) যোগ দিয়েছেন অভিনয়শিল্পীরাও। হলিউড ইন্ডাস্ট্রি থমকে গেছে। আটকে আছে কাজ। এমনকি যেসব সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, সেগুলোও আটকে গেছে। প্রিমিয়ামে অংশ নিচ্ছেন না সিনেমার কলাকুশলীরা।
৬৩ বছরে এই প্রথম এমন ধর্মঘট দেখা গেল হলিউডে। বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে প্রথমে ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। পরে যোগ দেন অভিনেতারা।
ধর্মঘটের কলকাঠি নাড়ছেন কারা?
মূলত তিনটি ইউনিয়ন বা সংগঠন এ ধর্মঘটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব ইউনিয়নের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় এ সংকট।
সবার আগে বলতে হবে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড এবং দ্য আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টের (স্যাগ-এএফটিআরএ) কথা। এই ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত আছেন হলিউডের ১ লাখ ৬০ হাজার কলাকুশলী। এর মধ্যে অভিনয়শিল্পীরাও রয়েছেন।
এরপর রয়েছে রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। এতে যুক্ত আছেন সিনেমা, টেলিভিশন নাটক, ধারাবাহিক, রেডিও ও বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ার জন্য গল্প লেখা লেখকেরা।
বাকি সংগঠনটি হলো অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার্স অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোডিউসারস (এএমপিটিপি)। এতে যুক্ত আছে ডিসনি ও প্যারামাউন্ডের মতো হলিউডের বেশ কয়েকটি নামিদামি স্টুডিও। এ ছাড়া যুক্ত আছে টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ফক্স নিউজ থেকে শুরু করে এনবিসি ও স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন। এই পক্ষের সঙ্গেই সমঝোতা হচ্ছে না বাকিদের।
কি কারণে এ ধর্মঘট?
গত কয়েক বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পী ও লেখকদের পেমেন্টের ক্ষেত্রে। টেলিভিশন সিরিজে যেমন দীর্ঘদিন এপিসোড থাকে, স্ট্রিমিং সাইটে তেমন থাকে না। কম পর্বে শেষ হয়। তবে পরে আবার দেখা যায়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, সাধারণত লেখক ও অভিনেতারা এসব কাজ থেকে এককালীন পেমেন্ট পেয়ে থাকেন। কিন্তু পরে বাড়তি আয়ও হয়ে থাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু সে আয় থেকে কিছুই পান না লেখক ও অভিনয়শিল্পীরা। এটি অন্যায্য বলে দাবি করছেন তাঁরা।
আরও একটি কারণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার। অভিনয়শিল্পীদের কণ্ঠস্বর এবং অঙ্গভঙ্গি স্ক্যান করে রাখা হচ্ছে। পরে তাঁদের অনুমতি না নিয়েই সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে এই এআইয়ের মাধ্যমে।
এতেই আপত্তি জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পীরা। তাঁদের দাবি, এমন করতে হলে, তাঁদের জানিয়ে নিতে হবে। আর এ জন্য তাঁদেরও করতে হবে পেমেন্ট।
বিবিসি বলছে, হেলথকেয়ার পরিষেবা নিশ্চিত করাও ধর্মঘটের আরেকটি কারণ।
গত মে মাসেই এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন লেখকেরা। তবে সম্প্রতি কয়েক দফা বৈঠকের পরও সমঝোতা না আসায় আবার শুরু হয়েছে এ ধর্মঘট। স্টুডিওগুলো ছাড় দিতে রাজি নয়। আর আন্দোলকারীরাও রাস্তা ছাড়বেন না।
এ কারণে কতদিন এ ধর্মঘট চলবে, তা বলা যাচ্ছে না।
মে মাস থেকে ধর্মঘট শুরু করেন হলিউডের সাড়ে এগারো হাজার লেখক। ১৯৬০ সালের পর এমন ধর্মঘট এই প্রথম। এতে করে হলিউড ইন্ড্রাস্ট্রিতে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হলিউড অভিনেতা ব্রায়ান কক্স বিবিসিকে জানিয়েছেন, এ আন্দোলন চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত চলতে পারে।
ব্রায়ান বলেন, ‘স্টুডিওগুলো আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কারণ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে তাদের প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে হবে। লেখক বা অভিনেতাদের সঙ্গে এ অর্থ ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা তাদের নেই।’
You must be logged in to post a comment.