আরটিভিতে ১৬ আগস্ট থেকে প্রতি সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে প্রচার শুরু হচ্ছে নতুন ধারাবাহিক ‘‘গোলমাল’’ । কায়সার আহমেদ ও আল হাজেনের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন: আনিসুর রহমান মিলন, শ্যামল মাওলা, রিওনক হাসান, নাদিয়া আহমেদ, সালহা খানম নাদিয়া, প্রাণ রায়, মুনিরা ইউসুফ মেমী, আজিজুল হাকিম প্রমুখ। ধারাবাহিক নাটকটি রচনা করেছেন আহমেদ শাহাবুদ্দীন এবং পরিচালনা করেছেন কায়সার আহমেদ ও আল হাজেন।
কাহিনী সংক্ষেপ: নানা জেলার নানা লোকের বাস জনতা হাউজিংয়ে। ব্যক্তিগত ও নাগরিক জীবনের নানা ঘটনায় এখানকার লোকদের মধ্যে গোলমাল হয়। আবার মিলও হয়। এখানে প্রেম আছে। বিরহ আছে। আছে পরচর্চা। আমাদের গল্প জনতা হাউজিংয়ের পাশাপাশি তিন বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে। একটা বাড়ির মালিক বরিশালের জামানত আলী। আরেকটা বাড়ির মালিক নোয়াখালীর কাইজার হোসেন। অন্য বাড়ির মালিক সিলেটের জব্বার আলীর। তিন জনেরই গাড়ি আছে। জামানত আলী তার বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘জামানত বাড়ি’। কাইজার হোসেনের বাড়ির নাম ‘কাইজার ভিলা’। অন্যদিকে জব্বার আলী তার স্ত্রী কুসুমের নামে বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘কুসুম ভিলা’।
জামানত আলীর বাড়ির ফাউন্ডেশন ছয় তলার হলেও টাকার অভাবে তিনি চারতলা পর্যন্ত তৈরি করতে পেরেছেন। অন্যদিকে কৃপণ স্বভাবের কাইজার হোসেন ছয় তলাই করেছেন। আবার ঘুষের টাকায় নিজের নামে বাড়ি বানাতে না পেরে স্ত্রীর নামে পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। এতে ঈর্ষায় ভোগেন কুচক্রী জামানত আলী। তিনি কাইজার হোসেনকে নানাভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করে।
কাইজার হোসেন যখন বাড়ি ভাড়া দেয়ার জন্য TO-LET ঝুলান তখন কুচক্রী জামানত আলী গোপনে TO-LET এর মাঝখানে I বসিয়ে দেন। এতে TO-LET হয়ে যায় TOILET । এটা দেখে জামানত আলীকে সন্দেহ করেন কাইজার হোসেন। কিন্তু জামানত আলী সেটা স্বীকার করেন না। এটা নিয়ে দু’জনের মধ্যে ব্যাপক গোলমাল হয়। দু’জনের এই গোলমালে মজা নেন সিলেটের জব্বার আলী। মাঝে মাঝে তিনি উস্কানি দেন জামানত আলী ও কাইজার হোসেনকে বিবাদ লাগানোর জন্য। মাঝে মাঝে তার সঙ্গেও গোলমাল হয় জামানত আলী ও কাইজার হোসেনের মধ্যে।
নাটকের গল্প শুরু হবে কাইজার হোসেনের বাড়িভাড়া দেয়ার জন্য TO-LET ঝুলানো থেকে। ক্ষুব্ধ কাইজার হোসেন জামানত আলীকে অপদস্থ করতে তার বাড়ির নামে ‘বাড়ি’র ওপর কাগজে লিখে দেনÑ ‘বাজেয়াপ্ত’। এতে বাড়ির নাম হয়ে যায় ‘জামানত বাজেয়াপ্ত’। প্রতিশোধ নিতে জামানত আলী গোপনে ‘কাইজার ভিলা’র ‘ক’ অক্ষরের ওপর ‘ম’ বসিয়ে দেন। এতে ‘কাইজার ভিলা’ হয়ে যায় ‘মাইজার ভিলা’। অর্থাৎ কৃপণের বাড়ি। এটা নিয়ে দু’জনের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়। এদের নিত্য গোলমালে হাউজিংয়ের লোকজন অতিষ্ঠ। এরা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘নোয়াখালী-বরিশালের লোকজন আসলেই খারাপ।’
TO-LET ঝুলানোয় কাইজার হোসেনের বাড়িতে ভাড়াতে হয়ে আসে রহস্যময়ী মেয়ে কেটি। তার পুরো নাম কাঁকন তালুকদার। সংক্ষেপে কেটি। সে স্বামী বিদেশে থাকে বলে একটা কাজের মেয়ে নিয়ে কাইজার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া ওঠে। কাজের মেয়ে চায়নাকে সে ছোটবোন বলে পরিচয় দেয় সবার কাছে। কেটি বিভিন্ন ছেলেকে পটিয়ে টাকা রোজগার করে। কিন্তু কারো কাছে ধরা দেয় না। সে এখানকার অনেক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক করে দাম্পত্য অশান্তি তৈরি করে।
জামানত আলীর পরিবারে রয়েছে স্ত্রী মোমেনা ও মেয়ে ছবি। আর আছে কেয়ারটেকার দবির ও ড্রাইভার সোবাহান। এরা সবাই বরিশালের। অন্যদিকে কাইজার হোসেনের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী জুলেখা ও ছেলে জামি। আর রয়েছে ড্রাইভার মোবারক। সবার বাড়ি নোয়াখালী। আর জব্বার আলীর বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী কুসুম, ছেলে নাজিব ও মেয়ে নীলা। আর রয়েছে ড্রইভার সাদেক। সবার বাড়ি সিলেট।
এই তিন বাড়িতে ঠিকা কাজ করে বগুড়ার মেয়ে চাঁদনি। সে দেখতে সুন্দর ও অতি ধুরন্ধর। সে এক বাড়ির কথা আরেক বাড়িতে বলে যেমন ঈর্ষা তৈরি করে আবার গোলমালও বাধিয়ে দেয়। শুধু তাই না সে তিন বাড়ির ড্রাইভারদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেও টাকা খসায়। আবার তিন ড্রাইভারের মধ্যে গোলমাল লাগিয়ে দেয়। এটা করতে গিয়ে সে মাঝে মাঝেই ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে ঠিকই নিজেকে বিপদমুক্ত করে। তার বুদ্ধির কাছে সবাই ধরা খেয়ে যায়। সে মনে মনে পছন্দ করে জব্বারের ছেলে নাজিবকে। তার সেবাযতœ করে মন ভোলাতে চায়। কিন্তু নাজিব পছন্দ করে নাওমিকে। চাঁদনি এই প্রেম ভাঙতে নানা ধরনের ঘিরিঙ্গি করে। তার ঘিরিঙ্গির কারণে নাজিব ও নাওমির প্রেম মাঝে মাঝেই ভাঙনের মুখে পড়ে যায়। আবার জোড়া লাগে।
কাইজার হোসেনের একমাত্র ছেলে জামি প্রেম করার চেষ্টা করে জামানত আলীর একমাত্র মেয়ে ছবির সঙ্গে। ছবি অত্যন্ত রাগী ও ঝগড়াটে মেয়ে। তার মা মোমেনা তাকে নাচ শেখান। সে যখন বাসায় নাচের প্র্যাকটিস করে তখন নিচতলার এক রুম ভাড়া নেয়া ব্যাচেলর ভাড়াটে বদির ডিস্টার্ব হয়। তার বাড়ি রাজশাহী। সে একজন হ্যাকার। অনেক টাকার বিনিময়ে এক কোম্পানির গোপন তথ্য হ্যাক আরেক কোম্পানিতে দেয়। তার এই কাজের খবর কেউ জানে না। সে চলাফেরা করে সাধারণ মানুষের মতো। হাতে টাকা থাকতেও বাড়িভাড়া দেয়ার সময় জামানত আলীকে ঘুরায়, যাতে জামানত আলী মনে করেন তার হাতের অবস্থা ভালো না। জামানত আলী এটা নিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন। ভাড়া দেয়ার জন্য আলটিমেটাম দেন। তারপর ভাড়া দেয় বদি।
ছবির প্রতিদিনের নাচের প্র্যাকটিসে বিরক্ত বদি একদিন কাঠের মোটা একটা লাঠি দিয়ে ছাদে গুঁতা মারতে থাকে। সেই শব্দ চলে যায় জামানতের বাসায়। এতে ছবির ডিস্টার্ব হয়। সে বদিকে ধমকায়। বদি বলে,
‘এবার বোঝেন, কেমন লাগে? আমারও ডিস্টার্ব হয় আপনে যখন ধুপ ধুপ শব্দ করে নাচেন।’ কিন্তু কেউ কারো জায়গা থেকে সরে না। ডিস্টার্ব পাল্টা ডিস্টার্ব চলতে থাকে। চলতে থাকে বদি আর ছবির মধ্যে ঝগড়া। অন্যদিকে জামি প্রেম করার চেষ্টা করে ছবির সঙ্গে। ছবি নোয়াখাইল্যা ছেলের সঙ্গে প্রেম করতে চায় না। সে জামির ওপর বিরক্ত হয়। জামিকে ঝাড়ি মারে। শুধু তাই না, ফেসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করে দেয় জামিকে। তারপরও জামি তার পিছু ছাড়ে না।
এক পর্যায়ে জামি কৌশল করে। সে জানে, ছবি সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। জামি ফেসবুকে রাজিব নামে একটা ফেক আইডি খোলে। লিভস ইন লেখে ঢাকা। ফ্রম লেখে বরিশাল। আর প্রোফাইলে সুদর্শন একটা যুবকের ছবি দেয়। তারপর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় ছবিকে। বরিশালের ছেলে বলে ছবি তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে। এরপর ফেক আইডি থেকে ছবির সঙ্গে চ্যাট করা শুরু করে। চ্যাট করতে করতে প্রেম হয়ে যায় দু’জনের। এক পর্যায়ে ছবি দেখা করতে চায়। জামি যায় দেখা করতে। তাকে দেখে ক্ষুব্ধ হয় ছবি। জামি তখন বলে, ‘আমিই রাজিব।’ তাতে কাজ হয় না। প্রতারণা করার জন্য ছবি আরো ক্ষেপে যায় জামির ওপর।
দীর্ঘ গোলমাল ঝগড়াঝাটির পর তাদের মধ্যে প্রেম হবে। এটা জানাজানি হলে জামানত আলী ও কাইজার হোসেনের মধ্যে গোলমাল আরো বেড়ে যাবে। তারা কেউ কারো সন্তানের দোষ ধরেন না। কাইজার হোসেন বলেন, ‘আপনার মেয়ে আমার বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য আমার ছেলের পিছ লেগেছে।’ অন্যদিকে জামানত আলী বলেন, ‘আপনার ছেলে আমার বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য আমার মেয়ের পিছ লেগেছে।’ কেউ কারো সঙ্গে ছেলেমেয়ে বিয়ে দিতে চান না। কিন্তু কাইজার হোসেনের ধুরন্ধর নোয়াখাইল্যা স্ত্রী জুলেখা চান তার ছেলে ছবিকে বিয়ে করুক। তাহলে জামানত আলীর বাড়ি তার ছেলের হয়ে যাবে। এই কথা তিনি স্বামী কাইজার হোসেনকেও বোঝান। স্ত্রীর বুদ্ধি পছন্দ হয় কৃপণ কাইজার হোসেনের। বিনা পয়সায় জামানত আলীর বাড়ি পাওয়া যাবে ভেবে তিনি খুব খুশি হন। ছেলে জামিকে বলেন, ‘যেভাবেই
হোক ছবিকে বিয়ে কর।’ কিন্তু জামি কিছুতেই ছবিকে বাগে আনতে পারে না। নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে এক পর্যায়ে প্রেম হবে জামি ও ছবির। কিন্তু ছবি জানে, তার বাবা নোয়াখাইল্যা ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেবেন না। তাই সে পালিয়ে বিয়ে করে জামিকে। মাথায় হাত পড়ে জামানত আলীর। তিনি হায় হায় করতে থাকেন এই ভেবেÑ ভবিষ্যতে তার বাড়ি কাইজার হোসেনের হাতে চলে যাবে। তিনি কী করবেন, ভেবে পান না। ওদিকে খুশি হন কাইজার হোসেন। জামানত আলী জামির নামে অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ ধরার চেষ্টা করে জামিকে।
জামানত আলী ও কাইজার হোসেনের মধ্যে যখন নিত্য গোলমাল লেগে থাকে তখন তাদের ভাড়াটেদের মধ্যেও নানা ঘটনা নিয়ে গোলমাল হয়। এখানেও জেলায় জেলায় রেষারেষি দেখা যায়। জামানত আলীর বাড়ির তিনতলায় ভাড়া থাকেন বরিশালের হায়দার সাহেব এবং চারতলায় ভাড়া থাকেন সিলেটের আরমান সাহেব। আরমান সাহেবের পরিবারে আছে স্ত্রী রুবি, শালা মোমিন ও কাজের মেয়ে নূরী। অন্যদিকে হায়দার সাহেবের পরিবারে আছে স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে মুক্তি ও কাজের মেয়ে চমকতারা। অফিসে সব সময় নোয়াখালীর এক কলিগের দ্বারা হেনস্থা হন বলে হায়দার সাহেব নোয়াখালীর লোকজনদের দেখতে পারেন না। কিন্তু বাসায় তার গোলমাল বেশি লাগে সিলেটি আরমান সাহেবের সঙ্গে। আরমান সাহেব একটি বেরসকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরি করেন। তার গাড়ি আছে। গাড়ির ড্রাইভারের নাম সাদেক। বরিশালের মেয়ে বিয়ে করে জীবন নরকে পরিণত হওয়ায় আরমান সাহেব বরিশালের লোকদের দেখতে পারেন না। অন্যদিকে সিলেটের ছেলেকে বিয়ে করে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ায় রুবি সহ্য করতে পারে না সিলেটের লোকজনদের। খুটিনাটি বিষয় নিয়ে স্ত্রী রুবির সঙ্গে সব সময় ঝগড়া হয় আরমান সাহেবের। ঝগড়ার সময় মোমিন তার বোনের পক্ষ নেয়। এতে মোমিনের ওপর ক্ষুব্ধ হন আরমান সাহেব। তিনি মোমিনকে বাসা থেকে বের করে দিতে চান কিন্তু রুবির কারণে পারেন না।
মোমিন কিছু করে না। সে একই সঙ্গে বাড়িওয়ালা জামানত আলীর মেয়ে ছবির সঙ্গে প্রেম করে এই বাড়ির ভবিষ্যত মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। অন্যদিকে দেশি মেয়ে বলে চারতলার হায়দার সাহেবের মেয়ে মুক্তির সঙ্গেও প্রেম করার চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তি পছন্দ করে নিচতলার বদিকে। যে কারণে মুক্তির সঙ্গে প্রেম করতে চেয়ে ঝাড়ি খায় মোমিন। ঝাড়ি খায় ছবিরও। বিরক্ত করার জন্য ছবি ও মুক্তি তাদের বাবার কাছে নালিশ জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হন জামানত আলী ও হায়দার সাহেব। তারা দু’জনই মোমিনের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। আরমান সাহেব এজন্য মোমিনের ওপর আরো ক্ষুব্ধ হন। কিন্তু রুবি তার ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মেনে নিতে রাজি না। সে এটা নিয়ে জামানত আলী ও হায়দার সাহেবের সঙ্গে ঝগড়া করে। বলে, ‘আপনারা আপনাদের মেয়েদের ঠিক করেন। তাদের কারো চরিত্র ভালো না। তারা আমার ভাইয়ের সঙ্গে টাঙ্কি মারার চেষ্টা করে।’
জামানত আলী বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেন রুবিকে। রুবি বলে, তার বাবা একজন উকিল। উচ্ছেদ করতে চাইলে সে বাবাকে ধরে মামলা করবে। এতে জামানত আলী দমে যান। অন্যদিকে আরমানের ড্রাইভার সাদেক ও হায়দার সাহেবের কাজের মেয়ে চমকতারার মধ্যে প্রেম চলে। সাদেক মাঝে মাঝেই আরমান সাহেবকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফেরার সময় যাত্রী তুলে টাকা আয় করে। সেই টাকায় চমকতারাকে বিভিন্ন জিনিস কিনে দিয়ে খুশি রাখে। আরমান সাহেব এটা জানতে পারেন না।
ওদিকে ঠিকমতো কাজ না করে শুধু টিভি দেখার জন্য নূরীর ওপর বিরক্ত রুবি। সে হায়দার সাহেবের কাজের মেয়ে চমকতারাকে ভাগিয়ে আনার চেষ্টা করে। বেশি বেতন দেয়ার লোভ দেখায়। চমকতারা বেশি বেতনের কথা ভাবে না। সে ভাবে সাদেকের কথা। আরমান সাহেবের বাসায় কাজ নিলে তার সাদেকের সঙ্গে প্রেম করতে সুবিধা হবে। এজন্য সে হায়দার সাহেবের বাসার কাজ ছেড়ে আরমান সাহেবের বাসায় কাজ নেয়। এতে সেলিনা ক্ষুব্ধ হন রুবির ওপর। দু’জনের মধ্যে মারমুখি ঝগড়া হয়। ময়লা নিয়েও আরমান সাহেব ও হায়দার সাহেবের পরিবারের মধ্যে গোলমাল হয়। প্রায়ই দেখা যায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি ঠিকমতো ময়লা নিতে আসে না। ঘরে ময়লা জমে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। হায়দার সাহেবের স্ত্রী সেলিনা দুর্গন্ধের হাত থেকে বাঁচতে ময়লার ব্যাগ বাইরে দরজার এক পাশে রাখার কথা বলেন কাজের মেয়েকে। কাজের মেয়ে সেটাই করে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ময়লার গন্ধে বিরক্ত হন আরমান সাহেব। তিনি ডোরবেল বাজিয়ে ময়লা বাইরে রাখার জন্য চিল্লাচিল্লি শুরু করেন। সেলিনা কিছুক্ষণের জন্য ময়লার ব্যাগ ভেতরে রেখে আরমান সাহেবের চিল্লাচিল্লি থামান। তারপর আবার বাইরে রাখেন। আরমান সাহেব এরপর জামানত আলীর কাছে নালিশ করেন। হায়দার সাহেব বরিশালের লোক বলে জামানত আলী তার পক্ষ নেন। তিনি আরমান সাহেবকে খুশি করার জন্য হায়দার সাহেবের সঙ্গে ঝগড়া করেন। আরমান সাহেব চলে গেলে হায়দার সাহেবকে বলেন, ‘আমি আপনের ময়লা ফালানের ব্যবস্থা করতেছি। আপাতত ময়লা ঘরে রাখেন।’
সেলিনা আবার ময়লা ঘরে রাখে। অনেক রাতে কেয়ারটেকার দবিরকে দিয়ে জামানত আলী হায়দার সাহেবের বাসার ময়লা কাইজার হোসেনের বাড়ির সামনে ফেলান। সকালে বাড়ির সামনে ময়লা দেখে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন কাইজার হোসেন। তার সন্দেহ গিয়ে পড়ে জামানত আলীর ওপর। কিন্তু জামানত আলী কোনোভাবেই এটা স্বীকার করেন না। শুরু হয় ঝগড়া। এই ঝগড়ায় ক্লিকবাজি করেন আরমান সাহেব। তিনি নোয়াখালী আর বরিশালের মধ্যে গোলমাল বাধাতে গোপনে কাইজার হোসনেকে গিয়ে বলেন, ‘এই ময়লা হায়দার সাহেবের বাসার।’
কাইজার হোসেন তেড়ে যান হায়দার সাহেবের বাসায়। কিন্তু হায়দার সাহেব ময়লা ফেলার কথা স্বীকার করেন না। তাকে রক্ষা করতে তেড়ে যান জামানত আলী। তিনি বলেন, ‘এই ময়লা আপনের বাড়ির কোনো ভাড়াটে ফেলেছে।’ কাইজার হোসেন সেটা মেনে নেন না। ওদিকে হায়দার সাহেবের মনে প্রশ্ন জাগে, তার বাড়ির ময়লার কথা কাইজার হোসেনকে কে জানালো? সন্দেহ গিয়ে পড়ে আরমান সাহেবের ওপর। তিনি জামানত আলীকে তার সন্দেহের কথা জানান। জামানত আলী ধরেন আরমান সাহেবকে। আরমান সাহেব কিছুতেই এটা স্বীকার করেন না। রুবি থামায় জামানত আলীকে। ওদিকে প্রতিশোধ নিতে কাইজার হোসেন তার বাড়ির ময়লা ফেলেন জামানত আলীর বাড়ি সামনে। এটা নিয়ে আবার শুরু হয় গোলমাল।
নিজের বাড়ি নোয়াখালী বলে নোয়াখালীর লোকজনের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে কাইজার হোসেনের। তিনি তার বাড়িতে নোয়াখালীর লোকজনদের বেশি ভাড়া দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বাড়িভাড়া কিছুটা কমও নিয়ে থাকেন। যেটা অন্য ভাড়াটিয়ারা জানে না। তার বাড়িতে অন্য জেলার ভাড়াটেদের মধ্যে রয়েছেন রংপুরের হামিদ সাহেব এবং রাজশাহীর কুতুব সাহেব। এরা সবাই নোয়াখালীর ভাড়াটেদের চাপে কোণঠাসা হয়ে থাকে। এজন্য তারা নোয়াখালীর লোকদের ওপর বিরক্ত। কিন্তু ক্লিকবাজ কুতুব ঠিকই নানা ঘটনা ঘটিয়ে নোয়াখাইল্যাদের ঘোল খাওয়ায়। সে প্রথম আবিষ্কার করে, এই বাসায় নোয়াখাইল্যাদের ভাড়া কম নেয়া হয়। এটা নিয়ে শুরু হয় গোলমাল।
সিলেটি জালাল সাহেব ঘুমকাতুরে মানুষ। যেখানে বসেন সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। কখনো কখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমান। তিনি ভাড়া থাকে সিলেটি বাড়িওয়ালা জব্বার আলীর বাড়িতে। চাকরি করেন একটা ফ্যাক্টরিতে। সেখানে একেক সময় একেক শিফটে কাজ করতে হয়। কখনো মর্নিং শিফট, কখনো ডে শিফট, কখনো নাইট শিফট। ফ্যাক্টরি থেকে ফিরেই তিনি ঘুমান। তার স্ত্রী নিনা রূপবতী। ঘুমকাতুরে হওয়ায় স্বামীর ওপর সে বিরক্ত। রাতেও ঠিকমতো স্বামীকে পায় না। এটা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে রাগারাগি করে। নির্বিকার প্রকৃতির মানুষ জালাল সাহেব এটা নিয়ে কোনো উচ্যবাচ্য করেন না।
একই জেলার মানুষ বলে জালাল সাহেবের সঙ্গে আরমান সাহেবের ভালো সম্পর্ক। স্ত্রীকে নিয়ে অতিষ্ঠ আরমান সাহেব মাঝে মাঝেই জালাল সাহেবের বাসায় গিয়ে সময় কাটান। জালালের স্ত্রী নিনার প্রতি দুর্বলতা কাজ করে। সব সময় মনে হয়, নিনা তার বউ হলে ভালো হতো। সে নিনার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। স্বামীকে নিয়ে বিরক্ত নিনাও সম্পর্ক গড়ে তোলে আরমান সাহেবের সঙ্গে। মাঝে মাঝে ফোনেও কথা হয়। জালাল সাহেবের যেদিন রাতে ডিউটি থাকে সেদিন আরমান সাহেব ও নিনা অনেক রাত পর্যন্ত পুটুর পুটুর করে কথা বলে।
এই ব্যাপারটা ধরে ফেলে মোমিন। সে কথাটা বোন রুবিকে জানিয়ে দেয়। রুবি ক্ষুব্ধ হয় আরমান সাহেবের ওপর। কিন্তু সে জানতে পারে না, আরমান সাহেব কার সঙ্গে কথা বলেন? সে মোমিনকে লাগিয়ে দেয় স্বামীর পিছনে। মোমিন পিছে লেগে যায় আরমান সাহেবের। সে নিনাকে আবিস্কার করে ফেলে। কথাটা জানায় রুবিকে। রুবি ধেয়ে যায় নিনার কাছে। চিল্লাচিল্লি করে নিনার সঙ্গে। তার চিল্লাচিল্লিতে কাইজার হোসেনের ভাড়াটে হামিদ ও কুতুব বিষয়টা জেনে যায়। ক্লিকবাজ কুতুব গিয়ে জালাল সাহেবকে নিনার কথা জানিয়ে দেয়। জালাল সাহেব ক্ষুব্ধ হন আরমান সাহেবের ওপর। রেগে যান স্ত্রীর ওপরও। স্ত্রীকে পাহারা দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে ছোটবোন ঝুমুরকে নিয়ে আসেন।
ঝুমুরের স্বভাব-চরিত্র ভালো না। ছেলেদের দেখলেই সে প্রেম করতে চায়। নিনা এটা বুঝতে পেরে প্রেম করার সুযোগ দিয়ে ঝুমুরকে হাত করে ফেলে। ঝুমুর চেষ্টা চালায় মোমিনের সঙ্গে প্রেম করার। মোমিনও ঝুমুরের সঙ্গে তাল মারে। এই সময় ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। যাত্রী তুলতে গিয়ে সাদেক কয়েকজন গাড়ি ছিনতাইকারিকে গাড়িতে তুলে ফেলে। তারা সাদেকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আরমান সাহেবের গাড়ি নিয়ে পালায়। গাড়িটা উদ্ধার করে পুলিশ। আরমান সাহেব পুলিশের কাছে জানতে পারেন, গাড়িতে যাত্রী তুলতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি সাদেককে চাকরিচ্যুত করেন। মাথায় হাত পড়ে চমকতারার। তার প্রেমের কী হবে? ক্ষুব্ধ চমকতারা কাজ করার সময় ইচ্ছে করেই আরমান সাহেবের বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করে। এতে রুবি ক্ষুব্ধ হয় চমকতারার ওপর। সে চমকতারাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। চমকতারা আবার কাজ নেয়ার চেষ্টা করে হায়দার সাহেবের বাসায়। কিন্তু সেলিনা তাকে কাজে নেন না। জালাল সাহেব দীর্ঘদিন ধরে কাজের মেয়ে পান না। তিনি চমকতারাকে কাজে নেন এই শর্তে, চমকতারা আরমান সাহেবের বাসার বিভিন্ন খবর তাকে জানাবে। চমকতারা তাতে রাজি হয়ে যায়।
ঘটনার এই পর্যায়ে জব্বার আলীর শ^শুর মারা যান। শ^শুরের মৃত্যুর পর সম্পত্তির ভাগাভাগির প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু কোনো সম্পত্তিই শ^শুরের না। সব জব্বার আলীর। চাকরি জীবনে প্রশ্ন উঠবে বলে জব্বার আলী ঘুষের টাকায় সম্পত্তি কিনেছিলেন শ^শুরের নামে। তিনি জমির ভাগ দিতে চান না। বলেন, সব জমি আমার টাকায় কেনা। কিন্তু তার শালা-সুমুন্দিরা বলে, ‘যার টাকাতেই কেনা হোক। সম্পত্তি আমার বাবার নামে কেনা হয়েছে। এই সম্পত্তির ভাগ আমরা পাই।’ এটা নিয়ে তুমুল গোলমাল হয়। মামলায় হয়। মামলায় হেরে যান জব্বার আলী। তার টাকার কেনা অনেক সম্পত্তি চলে যায় শালা-সুমুন্দির হাতে। জামানত আলী ও কাইজার হোসেন এতে খুব মজা পান। তারা বলে বেড়ান, ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি পড়েছে। চালাকি করে ঘুষের টাকায় শ^শুরের নামে জমি কিনে ধরা খেয়েছেন জব্বার আলী।’
এই সময় লন্ডন থেকে আসে আরমান সাহেবের ছোট বোন রিমি। ‘লন্ডনি কইন্যা’ রিমিকে পেয়ে মোমিন সবাইকে ছেড়ে দেয়। প্রেম করার চেষ্টা করে রিমির সঙ্গে। রুবিও এটাই চায়। মোমিন রিমিকে বিয়ে করে লন্ডনে চলে যাক। কিন্তু আরমান সাহেব চান না। তিনি বরিশালের মেয়েকে বিয়ে করে ধরা খেয়েছেন। বোনকে তাই বরিশালের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে দিতে চান না। কিন্তু রিমি জেলায় জেলায় এই রেষারেষি পছন্দ করে না। সে মোমিনের সঙ্গে মিশতে থাকে।
এক পর্যায়ে সম্পর্ক হয়ে যায় রিমি ও মোমিনের মধ্যে। এই সময় হ্যাকার বদি হ্যাকিং করার অপরাধে পুলিশের হাতে ধরা খায়। অন্যদিকে আরমান সাহেব রূপম নামে সিলেটের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে রিমির বিয়ে দিতে চান। কিন্তু রূপম যে বখাটে যুবক, এই খবর তিনি জানেন না। তিনি রূপমের সঙ্গে রিমির বিয়ে দিন-তারিখ ঠিক করে ফেলেন। মন খারাপ হয়ে যায় মোমিনের। রিমি তাকে কোর্ট ম্যারেজ করার আশ্বাস দেয়। দু’জন যেদিন গোপনে কোর্ট ম্যারেজ করতে যাবে সেদিনই লন্ডন থেকে আসে রঞ্জন। সে নিজেকে রিমির স্বামী বলে দাবি করে। চমকে ওঠে বাসার সবাই। কিন্তু রিমি সেটা অস্বীকার করে। এই ঘটনা রূপমের পরিবারের কানে চলে যায়। তারা বিয়ে ভেঙে দিতে চায়। কিন্তু রূপম রিমিকে বিয়ে করতে চায়। সে পথের কাঁটা সরাতে খুন করে রঞ্জনকে। রিমির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে এই খুনের সন্দেহভাজন আসামি হয়ে যায় মোমিন। মোড় ঘুরে যায় গল্পের।
You must be logged in to post a comment.