হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। আমেরিকার ভার্জিনিয়ার সেন্টারা হাসপাতালে আজ (২৫ জুলাই) সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অনেকেই জানেন, শাফিন আহমেদের জন্ম কলকাতায়। তাঁরা তিন ভাই—তাহসিন, হামিন ও শাফিন। বাবা কমল দাশগুপ্ত, মা ফিরোজা বেগম। দুজনেই সংগীতাঙ্গনের কিংবদন্তি। তবে জানেন কি, ছেলেবেলায় শাফিন আহমেদের নাম ছিল মনোজিৎ দাশগুপ্ত?
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর গোটা পরিবারসহ পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন শাফিন আহমেদরা। তারপর স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় পরিবর্তন করতে হয় তাঁর নাম। মনোজিৎ দাশগুপ্ত থেকে তিনি হয়ে যান শাফিন আহমেদ।
এক সাক্ষাৎকারে সেই গল্প জানিয়েছিলেন শাফিন। তিনি বলেন, ‘জন্ম যেহেতু কলকাতায়, আমরা জানি যে, ভারতবর্ষ যখন স্বাধীন হলো, তখন হিন্দু-মুসলিমের মাঝে যে দূরত্ব বা বিবাদ, সেই সময়ে তা প্রবল ছিল। সেখান থেকেই কিন্তু দুটো দেশের জন্ম—ভারত ও পাকিস্তানের। ভারতে থাকাকালীন অবস্থায় সম্পূর্ণভাবে যে সে একজন ভারতীয় নাগরিক সেজন্য হিন্দু পরিচিতিটা যে রকম প্রয়োজন ছিল, একই রকমভাবে যখন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসলাম তখন দেখা গেল মুসলিম পরিচয়টা খুব জরুরি ছিল। কারণ আমরা স্কুলে ভর্তি হতে পারছিলাম না।’
যোগ করে এই শিল্পী বলেন, ‘আমাদের বাসার ব্যাপারটা ছিল কি, বাবা খুবই প্রগ্রেসিভ একজন মানুষ ছিলেন। ধর্ম নিয়ে তাঁর মধ্যে সে রকম কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিল না। উনি গানের জগতের মানুষ, গান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আমরা ছোটকাল থেকে বড় হয়েছি আসলে ইসলাম ধর্মকে ঘিরেই। মায়ের কাছ থেকেই এই প্রভাব এসেছে। ইসলাম ধর্মের চর্চাটা বাসায় ছিল। এ ব্যাপারে আব্বার কোনো মন্তব্য ছিল না। উনার কোনো দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই তিনি চাপিয়ে দিতে চাননি। ফলে ওখানে (কলকাতা) থাকার সময়ে স্কুলে পড়তে গেলে স্বাভাবিকভাবে কমল দাশগুপ্তের মতো একজন সংগীতব্যক্তিত্বের সন্তান তো দাশগুপ্ত নামেই পরিচিত হবে। এটাই স্বাভাবিক। এটা দাশগুপ্তের কথা বললাম, আর প্রথম অংশ এসেছে বাবা-মায়ের দেওয়া নাম থেকেই। সেভাবেই মনোজিৎ দাশগুপ্ত।’
এ ছাড়া শাফিন আহমেদের ডাক নাম ছিল মুনা। সেই বিষয়ের জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ডাকনাম ছিল মুনা। পরিবারের মধ্যে অনেকে এ নামেই ডাকে। এ ছাড়া সংগীতাঙ্গনের অনেকে যাঁরা আমাকে ছোটবেলা থেকে চেনে, তখনও এমন তারকাখ্যাতি পাইনি, বয়স ১৭-১৮ হবে; সেই সময়ে যাঁরা চিনতেন তারাও মুনা নামটিই আগে বলেন।’
প্রসঙ্গত, সংগীত পরিবারে জন্ম শাফিন আহমেদের। বাবা কমল দাশগুপ্তের কাছে তিনি যেমন উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছেন, আবার মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুলসংগীত। এরপর বিদেশে পড়াশোনার কারণে পাশ্চাত্যর সংস্পর্শে ব্যান্ডসংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন শাফিন।
১৯৭৯ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘মাইলস’। এর কিছুদিন পর এতে যুক্ত হন দুই ভাই—শাফিন ও হামিন। এরপর ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘জন্মদিন’সহ বহু শ্রোতানন্দিত গান উপহার দেন তাঁরা। ব্যান্ডের বাইরেও শাফিনের জনপ্রিয় অসংখ্য গান রয়েছে।
You must be logged in to post a comment.