জাপানের কাছে প্রথম ম্যাচে পরাজিত হয়ে পুরো জার্মানি শিবিরের চেহারাই পাল্টে গেছে। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে রোববার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায় শুরু হওয়া ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে জয় ভিন্ন অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
১৯৮৮ সালের পর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে এখনো পর্যন্ত স্পেনকে পরাস্ত করতে পারেনি জার্মানি। কিন্তু সব পরিসংখ্যানের উর্ধ্বে উঠে জার্মানির এখন একটাই স্বপ্ন, জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া।
এশিয়ান পরাশক্তি জাপানের কাছে প্রথম ম্যাচে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয় জার্মানি। মাঠের লড়াইয়ের আগে মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়ে বেশি সরব ছিল জার্মানরা।
মানবাধিকারের প্রতি নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে ম্যাচের আগে আনুষ্ঠানিক ফটো সেশনে ১১জন খেলোয়াড়ই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ছবি তুলেছিলেন। এর মাধ্যমে তারা ফিফার মুখ বন্ধ করার একটি প্রতিকী ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু জাপানের কাছে পরাজিত হবার পর হান্সি ফ্লিকের দলের এমনিতেই মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ তো বলেই বসেছে ফুটবলের প্রতি মনোযোগী হবার সময় এসেছে জার্মানির।
বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় গ্রুপ পর্বের বিদায় হয়তোবা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য খুব একটা সুখকর বার্তা হবে না।
শুক্রবার চেলসি স্ট্রাইকার কেই হাভার্টজ বলেছেন খেলোয়াড়রা তাদের আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেছে। স্পেনের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তারা অবগত। বিশেষ করে স্পেন যেখানে ৭-০ গোলের বড় জয় দিয়ে কোস্টার রিকাকে বিধ্বস্ত করে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই চ্যালেঞ্জটা খুবই কঠিন।
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে হাভার্টজ বলেছেন, ‘সবাই আমাদের পরিকল্পনা জানে এবং সেটা কিভাবে কাজে লাগাতে হবে সেটা নিয়েই আমরা কাজ করেছি। অবশ্যই আমাদের শতভাগ মনোযোগ এখন ফুটবলকে ঘিড়ে, অন্য কিছু নয়।’
জাপানের কাছে পরাজয়ে ইতোমধ্যেই চেইন সুপারমার্কেট রেউইয়ে জার্মান দল থেকে তাদের স্পন্সরশিপ উঠিয়ে নিয়েছে। ৩০ বছর ইতিহাসে এই ম্যাচটি সবচেয়ে কম টিভি রেটিং পেয়েছে। হাভার্টজ বিষয়গুলো স্বীকার করে নিয়ে বেেলছেন, ‘আমরা জানি এই মুহূর্তে সবাই আমাদের সাথে নেই। টিম মিটিংয়েও কোচ আমাদের সেই বার্তাটাই দেবার চেষ্টা করেছেন।’
এবারের বিশ্বকাপে দুই ইউরোপিয়ান হেভিওয়েট এই প্রথম কোনো ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ২০০৬ সালের পর এই প্রথমবারের মত স্পেন বিশ্বকপের প্রথম ম্যাচে এত বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। পুরো ম্যাচে ৮১.৯ শতাংশ বলের পজিশন স্পেন ধরে রেখেছিল ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের পর যা সর্বোচ্চ। জার্মানির বিপক্ষে ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই এখন লা রোজাদের মূল লক্ষ্য। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরে উয়েফা নেশন্স কাপে মুখোমুখি ম্যাচে স্পেন ৬-০ গোলে জয়ী হয়েছিল।
২০১০ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার পর থেকে আন্তর্জাতিক আসরে স্পেন নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পর চার বছর আগে রাশিয়ায় শেষ ১৬ থেকে তাদের বিদায় নিতে হয়। তবে জার্মানির বিপক্ষে আগামীকাল জয়ী হতে পারলে আবারো তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ফিরে আসবে। জাপানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগেই তাদের নক আউট পর্ব নিশ্চিত হবে।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বর স্থানে থাকা জার্মানি সব ধরনের প্রতিযোগিতায় শেষ ১০টি ম্যাচের মাত্র দুটিতে জয়ী হয়েছে। কোচ হান্সি ফ্লিক স্বীকার করেছেন স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তার দল অবশ্যই চাপে আছে। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এখন একটাই লক্ষ্য অন্তত গ্রুপ পর্ব থেকে যেন টানা দ্বিতীয়বারের মত বিদায় না ঘটে। ১৯ বছরের মধ্যে শেষ সাতবারের মোকাবেলায় জার্মানি মাত্র একবার স্পেনকে হারিয়েছে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে প্রীতি ম্যাচটিতে ১-০ গোলে জয়ী হয়েছিল জার্মানি।
রোববার দিনের প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার সাথে যদি জাপান হার এড়াতে পারে তবে নক আউট পর্বে যেতে জার্মানিকে অবশ্যই হয়ী হতে হবে।
You must be logged in to post a comment.