বাস কনডাক্টর থেকে ভারতিয় দক্ষিণী সিনেমাজগতের ‘থালাইভা’— যে অভিনেতা পর্দার সামনে এলেই দর্শকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন, যাঁর ছবি মুক্তির প্রথম দিন দক্ষিণ ভারতে উৎসবের মহল তৈরি হয়, সেই রজনীকান্তকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করেন অনুরাগীরা।
রজনীকান্ত অভিনীত প্রতিটি সিনেমা বক্স অফিসে সাড়া ফেলে দেয় আজও। দর্শকেরা তাঁর ছবি মুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। ১৯৭৫ সালে ‘অপূর্ব রাগঙ্গল’ ছবির মাধ্যমে তিনি প্রথম বড়পর্দায় পা রেখেছিলেন।
চার দশক ধরে সিনেমাজগতে বিরাজমান এই অভিনেতা ১৬০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। অধিকাংশ ছবিই বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য লাভ করেছে।
বর্তমানে তিনি ৫৫ মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায়, আনুমানিক ৪৩৮ কোটি টাকা) সম্পত্তির মালিক। ছবিপ্রতি ৫০ কোটি টাকা পারিশ্রমিক উপার্জন করেন রজনীকান্ত বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর। ফোর্বসের রিপোর্ট অনুযায়ী, রজনীকান্ত ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১৪ নম্বরে রয়েছেন।
শুধু তামিল ইন্ডাস্ট্রিই নয়, তেলুগু, কন্নড়, হিন্দি ছবিতেও নিজের অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়ে দর্শকদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন অভিনেতা। তবে, মরাঠি মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে এখনও পর্যন্ত কোনও মরাঠি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রজনীকান্ত নেলসন দিলীপকুমারের সঙ্গে একটি ছবির জন্য হাত মিলিয়েছেন। এই ছবিতে অভিনয় করতে তিনি ১৫০ কোটি টাকা পারিশ্রমিক আদায় করবেন বলে দাবি করেন। যদিও এই ছবি প্রসঙ্গে এখনও কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।
কিন্তু তাঁর কর্মজীবন অভিনয় দিয়ে শুরু হয়নি, কর্নাটক রাজ্য পরিবহণ সংস্থার অন্তর্গত বাসের কনডাক্টর ছিলেন রজনীকান্ত। এই পেশায় থাকাকালীন তিনি অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন।
বাস কনডাক্টর হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করলেও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় তিনি নাটক করার সঙ্গে সঙ্গে মাদ্রাজ ফিল্ম ইন্সটিটিউটে অভিনয় প্রশিক্ষণের একটি কোর্সে ভর্তি হন। তখনই তামিল পরিচালক কে. বালাচন্দরের নজরে পড়েন তিনি। তার পর একের পর এক ব্লকবাস্টার ছবি উপহার দিয়ে চলেছেন দর্শকদের।
কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক রজনীকান্ত চেন্নাইয়ের পোয়েস গার্ডেন এলাকায় একটি বিলাসবহুল বাংলো কিনেছেন। ২০০২ সালে এই বাংলোটি কিনলেও বর্তমানে এর দাম ৩৫ কোটি টাকার কাছাকাছি।
বহুমূল্য গাড়ি নিজের সংগ্রহে রাখার শখও রয়েছে তাঁর। রোলস রয়েস থেকে বিএমডব্লিউ-সহ নানা নামী ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন তিনি। তাঁর সংগ্রহে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা মূল্যের একটি বেন্টলি লিমোসিন গাড়ি কিনেছেন। নিজের মনের মতো করো সাজানোর পর সেই গাড়ির মূল্য দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি টাকায়।
এ ছাড়াও টয়োটা ইনোভা, প্রিমিয়ার পদ্মিনী এবং হিন্দুস্তান মোটরসের একটি অ্যাম্বাসাডরও কিনেছেন তিনি। রোলস রয়েস মডেলের দু’টি গাড়িও রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। ১৬.৫ কোটি টাকা মূল্যের রোলস রয়েস ফ্যান্টম এবং ছয় কোটি টাকা মূল্যের একটি রোসল রয়েস ঘোস্ট রয়েছে।
রজনীকান্তের কাছে বিএমডব্লিউ এক্স৫ মডেলটিও রয়েছে। তাঁর মূল্য ৬৭.৯০ লক্ষ টাকা থেকে ১.৭৭ কোটি টাকা মূল্যের মধ্যে। ২.৫৫ কোটি টাকার মার্সিডিজ বেঞ্জ জি ওয়াগন এবং একটি ল্যামবর্ঘিনিও রয়েছে যার মূল্য ৩.১০ কোটি টাকা।
রজনীকান্ত ‘রাঘবেন্দ্র মণ্ডপম’ নামে চেন্নাইয়ের একটি অনুষ্ঠান হলের মালিক। এই হলে প্রধানত বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই হলে মোট হাজার জন অতিথিকে একসঙ্গে আপ্যায়ন করা যায়। এমনকি, ডাইনিং হলটি আয়তনে এত বড় যে, একসঙ্গে ২৫০ জন অতিথি বসে খেতে পারেন। এই আবাসনটি ৩৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন রজনীকান্ত।
সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন অভিনেতা। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, রজনীকান্ত তাঁর পারিশ্রমিকের অর্ধেকই সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন তহবিলে দান করেন। চেন্নাইয়ে যখন ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল, সেই সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ বন্যা তহবিলে দান করেছিলেন তিনি।
শুধু অভিনেতা হিসাবেই নন, সমাজপ্রেমী হিসাবেও তাঁর যথেষ্ট নাম রয়েছে। আজ রজনীকান্ত দক্ষিণের টলিউড ইন্ডাস্ট্রির ‘ডেমিগড’।
You must be logged in to post a comment.