বাঙালীর হুজুগে হাওয়ায় উড়িয়া “হাওয়া” দেখিতে গিয়াছিলাম টিকাটুলির ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলে। দ্বিতীয় সপ্তাহের শুক্রবারে ইভিনিং শো ৬টা-৯টায় সিনেমাটি দেখিয়া মনে হইলো একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য “কার্টুন” দেখিলাম যেন। বেহুদা ৩ ঘন্টা সময় নষ্ট করিলাম। যেহেতু পরিবারের সবাইকে হলে টানিয়া আনিয়াছি, তাই আমি চুপচাপ। পেছন হইতে এক লোক বলিতেছে, ‘এইডা কোন ছবি হইলো। চলে যাই চলো।’ পাশের জন যেতে চাচ্ছে না। তা নিয়ে দু’জনের কথা কাটাকাটি। আমার পাশে বসা এক বাপ-মেয়ে। বাবা বললেন, ‘ভাই আপনাদের জন্য তো সিনেমার ডায়লগই শুনতে পাচ্ছি না।’ প্রমোশন, প্রচার, প্রচারনায় তুঙ্গে থাকিয়া দর্শকদের হলে টানিতে সক্ষম হইলেও সিনেমাটি বিকৃতরুচির, কুরুচিপূর্ণ, অশ্লিল, চরম বিরক্তিকর, খাপছাড়া প্লটবিহীন গল্পের এক সস্তা উপস্থাপন।
যাহারা হাওয়া নিয়া হাওয়া হাওয়া করিতেছেন, মাতামাতি করিচ্ছেন বুঝিলাম না তাহাদের স্ক্রু ঢিলা হইয়া গিয়াছে, না কি আমি অবলা এই জগৎসংসারের বাহিরে৷ চলিয়া গেলাম! শেষপর্যন্ত প্রতিটি গল্প, উপন্যাস, সিনেমা চলচ্চিত্রের একটা ম্যাসেজ থাকে সমাজের কাছে। এই “হাওয়া” ছবির কোন ম্যাসেজই নাই, বলতে পারেন এর ম্যাসেজ হলো হাওয়া, হাওয়া। মানে কোন কিছুই না, শুধু হাওয়া হাওয়া।
একজন মাঝি যে অতীতে ডাকাতি করিতো শুধু তাহার একার দোষে ৭ জন নিরীহ মাঝি হত্যার শিকার হইলো। সিনেমার সবাই পটল তুলিলো। মাঝসাগরে ট্রলারে বাঁচিয়া রহিলো শুধু নাগিনবেশী রহস্যময় বেদের মেয়ে নায়িকা স্বয়ং। এই ট্রলারে তেল নাই, খাবার নাই। তাহা হইলে সেও হয়তো জীবন নিয়া তীরে ফিরিতে পারিলো না। মানে মারা গেল!
ছবির একটি দৃশ্য ভালো লাগিয়াছে- মাঝি চঞ্চল তার পোষা ময়না(শালিক) পাখিকে খাচা হইতে ছাড়িয়া দিলো। মাঝি বলিলো- ধারে কাছে তীর বা ডাঙা থাকিলে পাখি আর ফিরিয়া আসিবে না। আর তীর না থাকিলে ফিরিয়া আসিবে। পাখিটি ফিরিয়া আসিলো। মানে তীর কাছে নাই। পরে ক্ষুধার জ্বালায় পাখিটি মাঝির রোস্ট হইলো। গভীর সাগরে খাবার পানির স্বল্পতায় মাঝি অল্প অল্প পানি খাইলো, জগ হইতে গ্লাসে পানি ঢালিয়াও সেটা আবার জগে ফেরত রাখিলো। জমানো মাছের বরফ খাইয়া তৃষ্ণা নিবারণ করিলো- এইটা একটা দেখার বিষয়। একটা ম্যাসেজ হয়তো এই ছবিতে আছে তাহা হইলো সমুদ্রে বা মহাবিপদে ভালা খারাপ যেই কাজই করো মিলিয়া মিশিয়া থাকিতে হইবে।
তালে পড়িয়া হাওয়ায় পকেট ফাঁকা হইলো এই যা! করোনার পর প্রথম সিনেমা হলে গেলাম। অতৃপ্ত পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করিতে হইলো শীঘ্রই তাহাদের “পরান” অথবা অন্য আরেকটি ভালো ছবি হলে দেখাইতে হইবে।
বাংলা চলচ্চিত্র, বাংলাদেশী চলচ্চিত্র বলিয়া যাহারা গলা ফাটাইতেছেন তাহাদের বলিতে চাই স্পন্সর বা অনুদান পাইলেই টাকা মারিয়া দেয়ার চেষ্টা করিবেন না। দর্শকদের কথা চিন্তা করিয়া সিনেমাটি হজম করিবার মাল মসলা রাখিবেন। স্কয়ার টয়লেট্রিজ এর ‘রাধুনি’ গুড়া মসলার স্পসর পাওয়ায় “হাওয়া” ছবির শুরুতেই মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ এর রেডিমিক্স মসলার বিজ্ঞাপন দেখিলাম। এই সিনেমায়ও শুধু ‘মসলা’ দেখিলাম। মাছ, মাংস, ডাল, ভাত, পানি বা অন্য রসদ কোথাও পাইলাম না। এইখানে মসলা হিসাবে অভিনয় করিয়াছেন শিল্পীরা। তাহারা চমৎকার অভিনয় করিয়াছেন। প্লটবিহীন গল্পকেও তাহারা অভিনয় দিয়া পোষাইয়া দিয়াছেন। তবে সিনেমার শুরুতে সেলুনে চঞ্চল চৌধুরীর দুই বগলের লোম খুর দিয়ে চাছা বা পরিস্কার করার নাপিতের দৃশ্যটা বড্ড কুরুচিপূর্ণ। একই ধারায় আগামীকাল কেউ যদি বলে ছবির প্রয়োজনে নায়ক নায়িকার নিম্নাঙ্গ ও গোপনাঙ্গ পরিস্কারের দৃশ্য সংযোজন করিতে হইবে তখন কি বলিবেন? এই ছবিতে সবার সামনে দাঁড়াইয়া মাঝির প্রস্রাব করার দৃশ্যটা কোন ভালো পরিচালকের কাজ হইতে পারে না। ভবিষ্যতেও হয়তো কেউ কেউ এরকমভাবে টাট্টি বা পায়খানার ছবি সংযোজন করিয়া বলিবে এইটা ছবির প্রয়োজনে! নায়িকার সামনে দিয়া টয়লেটে আসা যাওয়ার সময় কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ দৃশ্য সংযুক্ত করে ইচ্ছা করিয়াই ছবিটিকে রুচিহীন করিয়া তোলা হইয়াছে। অশ্রাব্য গালিগালাজ সংযুক্ত করে কেউ যদি বলে সিনেমা হিট করিবার জন্য করা হইয়াছে সেটা মানতে কষ্ট হয়। এসব অশ্লিল দৃশ্য অশ্রাব্য গালিগালাজ সেন্সর বোর্ডের কর্তারা কর্তন করিয়াছে কি না জানা নাই, তবে সিনেমার সময় ২ ঘন্টা ২২ মিনিট দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম এটা থেকে আর কিছু কাটিলে বা সেন্সর করিলে বোধহয় সেটা স্বল্পদৈর্ঘ্য হইয়া যাইতো বলিয়া আর কাঁচি চালানো হয় নাই।
এখন ডিজিটাল যুগ। ভুং ভাং কাট ছাট করিয়া সিনেমা গিলাইবেন সেইদিন আর নাই। মধুমিতায় দেখিলাম নিশান ছবির পোস্টার, ববিতা জাভেদের। পোস্টারে ‘আসিতেছে’ লেখা। এই আমলেও নিশান তাহলে হলে চলে? রুপকথা বানাইতে চাহিলে সেইটা রুপকথাই বানাইবেন। সামাজিক হইলে সামাজিক। কল্পকাহিনী ফ্যান্টাসি হলে সেটাও সেইরকম বানাইবেন। মেয়াদোত্তীর্ণ গাঞ্জা খাইয়া সাগর পাড়ে বসিয়া লিখিলেই গল্প হিট হইবে সেটা ভাবা ঠিক নয়। চাপাবাজির এই হিট সিনেমা দেখিয়া অনেকেরই হিটস্ট্রোক হইতেছে। আপনি সমুদ্রে জেলেদের মাছ ধরা নিয়া ছবি বানাইলেন, আর তাহাতে নাগিন ফ্লেভার দিয়া ভারতীয় সিরিয়াল দেখা মহিলাদের হলে টানিবেন সে চিন্তা করাটা কি ঠিক হইলো।
শুধু প্রচারণা চালাইয়া প্রতারণা করিবেন এ কেমন কথা? এই ছবির চেয়ে অনেক নাটকের প্লটও ভালো। শুধু সাগরে ট্রলার নিয়া মাছ ধরিতে গেলাম, আর সিনেমা হিট সেইটা এতো সহজ নয়। এই ছবিতে শক্তিশালী কোন প্লট নেই। যদি ইলিশ মাছ ধরা নিয়া ছবিটি বানানো হইতো তাহা হইলেও ভালো প্লট হইতো। সরকার ঘোষিত ইলিশ মাছ ধরা বন্ধের সময় লুকাইয়া মাছ ধরা ও চুরি করা হয়। সেইটা নিয়াও সিনেমা হইতে পারে। যদি সুনামী, সিডর, আমফান বা ঘূর্ণিঝড় নিয়া প্লট হইতো তাহা হইলেও ভালো গল্প হইতো। সমুদ্র পথে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ নিয়াও ভালো প্লট হয়। গভীর সমুদ্রে মাদার চিংড়ি(যে চিংড়ি হ্যাচারিতে ডিম দেয়) ধরা নিয়াও ভালো প্লট হইতে পারিতো। হাঙ্গর, ডলফিন, তিমি নিয়াও অনেক ভালো প্লট তৈরী হইয়াছে। ড্রাগ, নারী পাচার, সমুদ্রে জাহাজ বা ট্রলার ডাকাতি নিয়াও কত সুন্দর গল্প কাহিনী চলচ্চিত্র হইয়াছে পৃথিবীতে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, টাইটানিক, মৎসকুমারী নিয়াও অনেক সুন্দর সুন্দর চলচ্চিত্র হইয়াছে। বাংলাদেশ সমুদ্রে অনেক এলাকা পাইয়াছে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে, সেইটা নিয়াও হইতে পারে চলচ্চিত্র। সমুদ্র তলের তেল গ্যাস সামুদ্রিক সম্পদ নিয়াও হইতে পারে চলচ্চিত্র।
মৌলিক গল্প লিখবো বলিয়া বেদেনি ও নাগিনকে একটি ট্রলারে তুলিয়া দিয়া ফ্যান্টাসি বানাইতে হইবে? তাকে পানিতে নামাইতে হইবে? প্রচারণার ফাঁদে পড়িয়া হয়তো মানুষ হলে গিয়াছে, প্রতারিত হইয়াছে, কেউ কেউ অর্ধেক সিনেমা দেখিয়া হল হইতে বাহির হইয়াও গিয়াছে। হল হাউজফুল হইয়াছে বলিয়াই এইসব বস্তাপচা সিনেমাকে ভালো বলিবার সুযোগ নাই।
বাংলাদেশের দুরন্ত টিভি চ্যানেলে বাচ্চাদের রহস্যনির্ভর, ভৌতিক কিছু নাটক হয়, সেইগুলো এই সিনেমার চাইতেও ভালো। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করিতেছে এই সিনেমাটি কোন সাধারণ দর্শক দ্বিতীয়বার দেখিয়াছেন কি না। আমার কয়েকজন বন্ধুকে সিনেমাটি ফ্রি দেখাইতে চাহিয়াও পারি নাই। আমার মনে হইলো প্রচারণায় আন্ধা হইয়া সবাই সিনেমা হলগুলোকে হাউজফুল করিতেছে। এ সিনেমা কেউ দ্বিতীয়বার দেখিয়াছে কি না সেটা আমার সন্দেহ।
এর আগেও মধুমিতায় সবাই দূরদেশ, শক্তি, ব্যবধান, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, পদ্মা নদীর মাঝি, মাটির ময়না, ব্যাচেলর, মনপুরা সিনেমাগুলো দেখিয়াছে। সেগুলোর তুলনায় “হাওয়া” কি সেটা মনে হয় সবার হৃদয়াঙ্গম করা উচিত। হেড়ে গলায় গান গাহিবার জন্য হিরো আলমকে যেভাবে তিরস্কার করা হইয়াছে, ড. মাহফুজকে যেভাবে ট্রল করা হইয়াছে, সেভাবে “হাওয়া” গ্রুপকে নিয়া ট্রল করিতে পারিলে ১৫০ টাকার টিকেট যাহারা ৩০০ টাকা খরচ করিয়া কিনিয়াছেন তাহারা কিঞ্চিৎ শান্তি পাইতেন। মেধাশূন্য মানুষের দ্বারা জোরজবরদস্তি সৃষ্ট এসব চলচ্চিত্র আমাদের হতাশ করিয়াছে। তাহার পরও নিয়ত করিয়াছি যতই কষ্ট লাগুক শীঘ্রই হলে গিয়া “পরান” ও “দিন দ্য ডে” ও দেখিবো। বুঝিতে চেষ্টা করিবো বাংলা চলচ্চিত্রকে কোথায় নিয়া যাইতে চেষ্টা করিতেছেন আমাদের সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র বোদ্ধারা!
এই সিনেমার আলোচিত ‘সাদা কালা সাদা কালা’ গানটি মজমায় বসিয়া সবাই ভাইরাল করিলো ঠিকই, বাস্তবতা হইলো সিনেমাটির মতো গানটিরও কোন আগামাথা নাই। গাওয়ার জন্য গাইলো এই আর কি? অনেকটা ‘হাট্টিমাটিম টিম’ কবিতার মতোই। শুনিলাম, ভালো লাগিলো। তবে কেনো ভালো লাগিলো বুঝিতে পারিলাম না। মাঝে মধ্যে মনে হয় আমি গল্প/সিনেমা লিখিলে হয়তো এদের চাইতেও ভালোমানের প্লট ও ভালোমানের গল্প লিখিতে পারিতাম!
আজ দেখিলাম হুদাই দর্শক শ্রোতারা হলে চিল্লাইয়া উঠিতেছে। বন্ধ পর্দা খোলার সময় যে আনন্দ হল্লা সেটা চলিলো পুরো সময় ধরিয়াই। বুঝিতে পারিলাম ছেলে পেলে দলে দলে হলে আসিয়াছে ইনজয় করিতে, সিনেমা দেখিতে নয়। নায়িকা শার্ট লুঙ্গি পড়িলে তাহারা চিল্লাইয়া উঠে, আবার নায়িকা গালি দিলেও তাহারা উল্লাসে ফাটিয়া পড়ে। সিনেমার একমাত্র নারী চরিত্র নায়িকা নাজিফা তুশিকে অশ্লীল মাগি, নটি শব্দগুলো ব্যবহার করিয়া ভিলেন চঞ্চল চৌধুরী যখন গালি দিচ্ছেন তাতেই হলে হাততালি, শীষ, কত কি? আরো কিছু অশ্লিল কথা বলিলেন, সেটা আমি আর লিখিতে সাহস পাইলাম না। বুঝিলাম না কি মানের দর্শক এরা। হলেও এ নিয়ে তর্কাতর্কি চলিতে দেখিলাম কয়েক দল দর্শকদের মধ্যে। সপরিবারে যাহারা ছবিটি দেখিতে আসিয়াছেন তাহারা পড়িলেন বিপাকে। হলে অভিভাবক ও শিশুরা এক সাথে ছবি দেখিতে বসিয়া বিব্রতকর অবস্থায় পড়িলেন জেলেদর মধুর(!) অশ্লীল গালিগালাজে। শুধু গালিগালাজের জন্য ছবিটা রেকর্ড করিলো সম্ভবত। আরেকটি বিষয়ে রেকর্ড করিয়াছে ছবিটা, সেইটা হইলো ছবির সব পুরুষ আর্টিস্টই মারা গেল ছবির শেষে। একজন মেয়ে আর্টিস্ট নায়িকাকে বাঁচাইয়া রাখা হয় নাগিন বা সাপ বানাইয়া। আগামীতে হয়তো তাকে পাবেন দ্বিতীয় সিক্যুয়ালে!
এক জেলেকে বটি দিয়া মাথায় কোপাইয়া মারা হইলো। মাথায় বটির কোপ নেয়া রক্তাক্ত সেই মৃত জেলেকে কয়েকবার দেখানো হইলো। বিদেশী যুদ্ধের সিনেমাগুলোতেও এসব রক্তারক্তির দৃশ্য মাঝে মধ্যে কম দেখানো হয়। ট্রলারে ৮ জন জেলে কোপাকুপি কইরা মারা গেলো। রক্তারক্তি সারা ট্রলারে। দূর্বল চিত্তের লোক ও শিশুদের জন্য এরকম রক্তারক্তির দৃশ্যগুলো দেখা সুখকর নয়। ছবিতে মাছ ধরিতে যাওয়া পুরুষ মাঝিরা মারা যায় নিজেরা মারামারি করিয়া। সিনেমার সমাপ্তি তাহলে কিভাবে হইবে? এর কি কোন তদন্ত হইবে। না, শেষমেষ দেখা গেলো নাগিন বা সাপ ভিলেন চঞ্চল চৌধুরী সহ শেষ জীবিত জেলেকে কামড়াইয়া মারিয়া ফেলিলো। মৃত দেহগুলো ট্রলার হইতে সাগরে ফেলিতে গিয়া সাপের ছোবলে মারা গেল চঞ্চল। ২ ঘন্টা ২২ মিনিটের সিনেমায় সাপ যেন হঠাৎ করিয়াই আসিলো শেষ সময়ে। গল্পলেখক বুঝিতে পারিলেন নাগিন না থাকিলে সিনেমা হিট হইবে না। বুঝাইতে চাইলেন নায়িকা নাগিন। মাঝে বুঝাইতে চাইলেন জ্বীন। কালাযাদুর প্রভাব। শেষে কোনটাই বুঝাইলেন না। এই বাঙালির চোখে ঠুলি পড়াইয়া হয়তো তিনি দ্বিতীয় সিক্যুয়াল ফাদবেন। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জালে ধরা পড়িলেন নায়িকা। কেউ বলিলো মাছ, কেউ বলিলো মানুষ। নায়ক শরিফুল রাজ জিজ্ঞাসা করিলেন, জ্বিন কি না। নায়িকা বলিলো, সে মানুষ, বাইদ্যার মেয়ে। আর যায় কই গল্পকার। নিয়া আসি সাপ। তাই বলিয়া হঠাৎ করিয়া সাপ বানাইতে হইবে? নায়িকা নাগিন না হইলে চলিতেছে না বুঝি সিনেমা? সিনেমার শেষ দৃশ্যে নায়িকা নাজিফা তুশি আসিলো মৃত নায়কের কাছে। পাশে শুইয়া সিনেমা শেষ করিলো। সবার হাততালি। হারাইয়া যাওয়া নাগিন, বাইদ্যা কন্যার রুপ দেখিয়া সবার পয়সা উসুল।
ব্রাভো! ব্রাভো!!
আহা!
কি যে চিন্তা পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজকের। ফ্যান্টাসি ও ভৌতিক বিষয় চিন্তা করিলে ৮০ এর দশকে বিটিভিতে দেখানো স্কুপিডু কার্টুন ফলো করিতে পারিতেন। সে আমলে সেখানে চমৎকার ভৌতিক গোয়েন্দা কাহিনী দেখানো হইতো, যা আজকের গল্পকাররাও বানাতে পারেন না। সেটা থেকে কপি করিলে এর চেয়ে ভালো গল্প বানানো যেতো। এখনো স্কুপিডু এই সিনেমাটির চেয়ে বেশী উপভোগ্য! হাজার টাকা খরচ করিয়া যাহারা ক্যামেরার কাজ দেখিয়াছেন, সমুদ্র দেখিয়াছেন বলিয়া গলা ফাটাচ্ছেন তারা একটু ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল দেখিলেই বুঝিবেন কোনটা কাজ আর কোনটা অকাজ।
তারপরও বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নতির কথা ভাবিয়া কয়েক হাজার টাকা খরচ করে মধুমিতায় ছবিটি দেখিলাম। মধুমিতা হলের করুন দশা, আর “হাওয়া” র বেহাল কল্পকাহিনী দেখে পুরাই হতাশ আমি। না ভৌতিক, না কল্পকাহিনী, না পরাবাস্তব, না বিশ্বাসযোগ্য, না বাস্তব, না ফ্যান্টাসি- পুরাই গাঞ্জুট্টি মার্কা তালগোল পাকানো একটি ছবি। এ ছবিটি টিভিতে ফ্রি দেখালেও দ্বিতীয়বার কেউ ২ ঘন্টা ২২ মিনিট সময় নষ্ট করিয়া দেখিবে কি না সন্দেহ আছে।
তারপরও কেউ দেখিতে চাহিলে, বন্ধু-বান্ধব নিয়া দেখিতে চাহিলে দেখিতে পারেন। তবে সপরিবারে দেখার মতো ছবি নয় এটা। মোটা দাগে কুরুচিপুর্ণ একটা ছবি এটা।
মন চাইতাছে বাসায় গিয়া
“হাওয়া হাওয়া
এ হাওয়া
খুশবু লুটায়া দে”
গানটি দেখি….
লেখাটি কাজী ইমরুল কবীর সুমন এর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।
You must be logged in to post a comment.