বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

নিজেদের আত্মজীবনী ঘেঁষা ‘অটোবায়োগ্রাফি’

বিনোদন প্রতিবেদক / ৭১ জন দেখেছেন
আপডেট : ডিসেম্বর ১, ২০২৩
নিজেদের আত্মজীবনী ঘেঁষা ‘অটোবায়োগ্রাফি’
দর্শক ফোরামের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। এতে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন নির্মাতা নিজেও। এ ছাড়া বাস্তব জীবনের মতো পর্দাতেও জুটি বেঁধেছেন তিশা-ফারুকী। গল্পটাও তাঁদের আত্মজীবনী ঘেঁষা। তো কেমন হলো তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন বা সিনেমাটি? এই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে ছোট্ট করে মাসখানেক আগের বাস্তব এক ঘটনার কথা বলি; এবং তা রিভিউয়ের প্রয়োজনে। যে ঘটনার বিহ্বলতা হতে এখনো বের হতে পারিনি।

রাত তখন সোয়া ১১টা প্রায়। রাজধানীর কাঁটাবন মোড় থেকে বনশ্রীগামী একটি বাসে রামপুরা যেতে রওনা হলাম। এর তিন-চার মিনিট পর বাসটি থামে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে। বাঁ পাশেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গলি। অকল্পনীয় এক ঘটনার মুখোমুখি হলাম তখনই। হঠাৎ দু’জন ছিনতাইকারী বাসের এক যাত্রীকে মারধর করে তাঁর মোবাইল ফোন-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই সময় আমার সামনের সিটে বসা এক যাত্রী ওই দুই যুবককে জিজ্ঞেস করেন, ‌‘আপনারা কারা? এমনভাবে এই লোককে মারধর করছেন কেন?’ এক-দুই কথায় তাঁর সঙ্গেও বাগবিতণ্ডায় জড়ায় ছিনতাইকারীরা। নিরুপায় হয়ে ভদ্রলোকটি চিৎকার দিয়ে নিজেকে ‘পুলিশের লোক’ জানান দিয়ে রিভলভার বের করে ধাওয়া দেয় ওই যুবকদের। আমরা যাত্রীরাও এতে একটু সাহস পাই। কিন্তু পরক্ষণেই ঘটে আরও ভয়াবহ ঘটনা। ওই ছিনতাইকারীরা সাত-আট জনের সিন্ডিকেট নিয়ে হাজির। সঙ্গে একজন নারীও! তারা যাত্রীদের নেমে যেতে বলে এবং গালিগালাজ করে ওই পুলিশ সদস্যের আইডি কার্ড দেখতে চায়। তখন তিনি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য পরিচয় দিয়ে আইডি কার্ড দেখান। এতেও দমে যায়নি ওই সিন্ডিকেট। আরও চড়াও হয়ে ভদ্রলোকের আর্মসসহ ছবি তোলে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পাশ থেকে ছিনতাইকারী চক্রের নারী সদস্যটি পুলিশের লোককে দেখিয়ে তাদের গ্রুপের নেতৃস্থানীয় একজনকে বলেন, ‘ভাই, আপনি যদি এই লোকের বিচার না করেন, তাহলে আমি বুঝব আপনি কোনো পুরুষই না।’ অবাক হলাম এই মহিলার কথায়। অথচ তিনি এই ঘটনার সময় ছিলেনই না। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে থাকলে যাত্রীরা স্বার্থপরের মতো বাস থেকে নেমে যেতে থাকে। ভয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। ভাবলাম, আগে আমিও নিজেকে রক্ষা করি। অঘটন ঘটে গেলে সেই ঘটনার সাক্ষী হওয়া যাবে! এ ছাড়া ক’দিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এমন একটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছিলাম। যে কারণে আরও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

যা হোক, কেন বললাম এই ঘটনা? এখানে লক্ষ্য করার বিষয়—এক. নারী ও দুই. অনিরাপত্তা। ওই পুলিশ ভদ্রলোক কিন্তু সহযাত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলেন। তেমনি ফারুকীর এই সিনেমাতেও একটি ঘটনার দৃশ্যায়ন রয়েছে। সেখানে তানভীর চরিত্রটি নিজের অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে মাঝরাতে ভয়াবহ আতশবাজি ও পটকা ফাটানো থামাতে বাসা থেকে বের হয়ে ফেঁসে যান। থানা-পুলিশসহ নানা কেলেঙ্কারিতে পড়তে হয় তাঁকে। যে ঘটনা সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার গলি বা কদর্যতার দিকে ইঙ্গিত করে। এমনকি চলচ্চিত্রের পর্দায় এই কাজে সহযোগী হিসেবে হাজির হয় এক ‘নারী’। এখানে ভিকটিম যদি নারী হতেন, তাহলে হয়তো ভিলেন হিসেবে থাকতেন ‘পুরুষ’! কিংবা অন্য কিছু!

চারপাশে ঘটে যাওয়া এমন কিছু ঘটনা উঠে এসেছে ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমায়। যেসব গল্প মিলে যেতে পারে আপনার সঙ্গেও! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই যে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, নির্মাতা হিসেবে এখানেই ফারুকীর মুনশিয়ানা। আর ওই ফেঁসে যাওয়া ‘তানভীর’ চরিত্রটি নির্মাতা নিজেই। তাঁকে যাঁরা না জানেন বা চেনেন, তাঁদের বোঝার উপায় নেই যে, তিনি প্রথমবার অভিনয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আর কাহিনি তিশা-ফারুকীর আত্মজীবনী–ঘেঁষা হওয়ায় তাঁকে আরও মানিয়ে গেছে।

‘তিথি’ চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশাও তাঁর ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। হয়তো মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে ফেরার পরপরই এ ধরনের একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগের কারণে এর সঙ্গে দারুণভাবে মিশে যেতে পেরেছেন তিনি। অনবদ্য তাঁর অভিনয়। অন্যান্য চরিত্রেও চমক ছিল। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর, মনোয়ার হোসেন ডিপজল, রিফাত চৌধুরী, ইরেশ যাকের, শরাফ আহমেদ জীবনসহ অনেকে। অভিনয়-সংলাপ সবই দুর্দান্ত। তবে ডিপজলকে সেই স্টেরিওটাইপ রূপেই দেখা গেছে! খুব একটা নতুনত্ব নেই।

এই সিনেমায় সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সংলাপ। দর্শকের মনে যা প্রভাব বিস্তার করে। শেষের দিকে, ইলহাম জন্ম নেওয়ার পর একজন বলে ওঠেন—‘নায়িকার মেয়ে সুন্দরী না হলে হয়!’ সচরাচরই হয়তো আমাদের চারপাশে এ ধরনের কথা শোনা যায়। কিন্তু কথাটা যে কী ভয়াবহ বর্ণবাদী আচরণ, সেটা অনেকে হয়তো জানেনই না। একটি শিশু পৃথিবীতে জন্মের পরপরই বর্ণবাদের শিকার হচ্ছে, ভাবা যায়?

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ ছবিতে সাউন্ড, সিনেমাটোগ্রাফি আহামরি না হলেও বেখাপ্পা লাগেনি অন্তত। সাউন্ড ডিজাইনে রিপন নাথ ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরে পাভেল আরিন ছিলেন পরিমিতি বোধ নিয়েই। এ ছাড়া আরেকটি বিষয় আরোপিত মনে হতে পারে। সেটা ‘তানভীর’কে ধরিয়ে দেওয়ার সময়। তখন একজন এমন বলে ওঠে—‘জ্বি, স্যার। উনি খুব ডেঞ্জারাস। ওনার একটা চলচ্চিত্র তিন-চার বছর ধরে সেন্সরে আটকে আছে।’ আসলে এখানে নির্মাতা ‌‘ধর্মের লেবাসধারী’ বোঝাতেই হয়তো চরিত্রটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এ ধরনের মানসিকতা শুধু এই শ্রেণির লোকই নয়, দেখতে খুবই সাধারণ মানুষও পোষণ করতে পারে। তাই সেটা এড়িয়ে গেলেও কোনো সমস্যা হতো বলে মনে হয় না।

সিনেমাজুড়ে দর্শকের দিকে নানা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থার নানা অসংগতি ও গোঁড়ামিকে (ট্যাবু) তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পের আবহে। যেমনটা দর্শকেরা তাঁকে পেয়েছেন ‘টেলিভিশন’ কিংবা ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ সিনেমায়। এবার সেই সিগনেচারেই নিজের সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ করেছেন ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’–তে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

এ বিভাগের আরো খবর

২১ জুন-23 অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান