‘হারবিন’ হলো চীনের সবচেয়ে উত্তরের প্রদেশ হেইলংজিয়াং-এর রাজধানী। বিংশ শতকের শুরুতে এই শহরে বসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইতো হিরোবুমিকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। মূলত কোরিয়াকে জাপানি অত্যাচারী শাসন থেকে মুক্ত করার জন্যই এই পরিকল্পনা। এই প্রেক্ষাপট নিয়েই সিনেমা বানিয়েছেন কোরিয়ার বিখ্যাত পরিচালক উ মিন-হো। শহরের নাম অনুসারেই রাখা হয়েছে সিনেমার নাম। এতে প্রধান দু’টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন কোরিয়ার এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত অভিনেতা হিউন বিন ও লি ডং-উক।
বর্তমান সময়ের বিশ্বব্যাপী কোরিয়ান সংস্কৃতির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পরিচালক উ মিন-হো এবং অভিনেতা হিউন বিন ও লি ডং-উক-এর অবদান অনেক। সেটারই যেন নতুন করে প্রমাণ মিলল ৮ সেপ্টেম্বর টরেন্টোতে। এদিন ‘হারবিন’-এর প্রিমিয়ার হয়েছে। তার আগে লাল গালিচায় হেঁটেছে তারা।
এই তিন তারকাকে একসাথে দেখার আশায় প্রিমিয়ারের বাইরে ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভক্তরা অপেক্ষা করছিলেন। ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লি ডং-উক বলেন, ‘টরেন্টোতে আমি প্রথমবার এসেছি। এখানে ভক্তদের দেখতে পেয়ে খুব কৃতজ্ঞ এবং খুব খুশি।’ এই অভিনেতা বিশ্বব্যাপী পরিচিত ‘মাই গার্ল’ টিভি সিরিজের জন্য।
এই সিনেমার প্রচারণা পত্রে বলা হয়, ‘হারবিন’ নামটি ছোট। তবে সাহসী প্রতিরোধী সেনাবাহিনীর জন্য এটা বেশ পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কোরিয়াকে জাপানি অত্যাচারী শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করেছিল। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন উ মিন-হো। যিনি ২০২১ সালে ‘দ্য ম্যান স্ট্যান্ডিং নেক্সট’ সিনেমার জন্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে এটাই ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার বড় স্বীকৃতি।
টরেন্টো স্ক্রিনিংয়ের বাইরে, অ্যাঞ্জেলাহ নামের ২৬ বছর বয়সী একজন ভক্ত বলেছেন যে তিনি কে-ড্রামা দেখে এবং কোরিয়ান চলচ্চিত্র, কে-পপ এবং কোরিয়ান সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বড় হয়েছেন। তার জন্য, টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভালে এ অভিনেতাদের দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলো কতটা সুদূরপ্রসারী হয়েছে। তাদের দুইজনকে এখানে টরেন্টোতে একটি ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্ক্রিন থেকে যেতে দেখা আমার জন্য বিশেষভাবে রোমাঞ্চকর। শিল্প সত্যই সীমাহীন, বাধা ভেঙে এবং মানুষের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে, তারা যেখান থেকেই হোক না কেন।
সাধারণত টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভালকে বলা হয় অস্কারের গেটওয়ে। সে হিসেবে ‘হারবিন’ বিশেষ কিছু অর্জন করবেন আগামী অস্কারে এমনটাই ধারণা চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের। অথচ এই সিনেমায় কোরিয়ান স্বাধীনতা সংগ্রামী আহন জুং-জিউনের ভূমিকা নিতে দ্বিধা করেছিলেন হিউন বিন। পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে এমন বড় সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। এ জন্য তিনি পরিচালক উ মিন-হো হিউনকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়েছেন। কারণে এখানে অভিনয় করানোর জন্য পরিচালক তিনবার চেষ্টা করেছেন।
হিউন বিন বলেন, একজন অভিনেতা হিসেবে আহন জুং-গেউনের ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করা সহজ নয়, কারণ কোরিয়ানদের নিজস্ব ধারণা এবং দেশপ্রেমিক শহীদ হিসেবে তাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমি জানতাম যে আহন খেলা একটি সহজ কাজ হবে না এবং এটি অনেক সাহসের প্রয়োজন। কিন্তু পরিচালকের সাথে আলোচনা করার পরে, আমি ভেবেছিলাম যে কোরিয়ান ইতিহাসের একজন মহান নায়কের চরিত্রে অভিনয় করার অনেক সুযোগ নাও থাকতে পারে এবং একজন অভিনেতা হিসাবে নতুন দিকনির্দেশনায় ভূমিকা নেয়া সত্যিই অর্থবহ হতে পারে।
এদিকে এবার এই উৎসবে রয়েছে বাংলাদেশের ‘সাবা’। যার নাম ভূমিকায় দেখা যাবে মেহজাবীনকে। অন্য দু’টি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী ও মোস্তফা মনওয়ার। তাদের অভিনয় দেখতে মুখিয়ে আছেন দর্শকরা। এরই মধ্যে এর দু’টি প্রিমিয়ার হয়েছ। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আর একটি প্রদর্শনী হবে। এগুলোতে মেহজাবীন ও মাকসুদের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রদর্শনী তিনটির টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। শুধু অভিনয় নয়, ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছেন মেহজাবীন। প্রযোজকের তালিকায় তার পাশাপাশি আছেন আরিফুর রহমান, তামিম আব্দুল মজিদ, ত্রিলোরা খান, মাকসুদ হোসেন ও বরকত হোসেন পলাশ। চিত্রগ্রহণ করেছেন বরকত হোসেন পলাশ।
টরেন্টোর এবারের আসরের লালগালিচায় আলো ছড়াবেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, সালমা হায়েক, সেলেনা গোমেজের মতো তারকারা। প্রতি বছর ১১ দিনের এই আয়োজনে সমবেত হয় অন্তত চার লাখ সিনেপ্রেমী। উৎসবে ১০০-১৩০টি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজ বেচাকেনা হবে। আশা করা হচ্ছে, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো বেশির ভাগ কন্টেন্ট কিনে নেবে।
৮১তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে থাকা আলফনসো কোয়ারনের ‘ডিসক্লেইমার’ (কেট ব্ল্যানচেট) দেখানো হবে টরেন্টোতে। এছাড়া অ্যামি অ্যাডামস অভিনীত ‘নাইটবিচ’ এবং আমেরিকান-দক্ষিণ আফ্রিকান অভিনেত্রী এমবেথ ডেভিডজ “ডোন্ট লেট’স গো টু দ্য ডগস টুনাইট’ চলচ্চিত্র দু’টির দিকে নজর থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তালিকার আরেক আকর্ষণ ওয়াশিংটন পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ‘দ্য পিয়ানো লেসন’। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটন। তার ছেলে ম্যালকম ওয়াশিংটন এই চলচ্চিত্রের পরিচালক। আর এতে অভিনয় করেছেন ডেনজেলের আরেক ছেলে জন ডেভিড ওয়াশিংটন।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর উৎসবের সমাপনী আয়োজনে থাকছে অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী রেবেল উইলসন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য ডেব’। অস্ট্রেলিয়ার একটি শহরে বসবাসরত কয়েকজন কাজিনের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে এই সঙ্গীতনির্ভর কমেডি।
টিআইএফএফ-এর সিইও ক্যামেরন বেইলি। টরেন্টো উৎসবের মূল পৃষ্ঠপোষক কানাডার বৃহত্তম টেলিকম প্রতিষ্ঠান রজার্স। এ ছাড়া কান ও ভেনিসের সাথে তুলনীয় বাজার স্থাপন করতে কানাডিয়ান সরকার থেকে এক কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার (২০৩ কোটি টাকা) পেয়ে থাকেন আয়োজকরা।
You must be logged in to post a comment.