শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

ট্রাফিক আইল্যান্ডেও ঘুমিয়েছেন অভিনেতা মাসুম আজিজ

ফোরাম প্রতিবেদক / ৩৫৩ জন দেখেছেন
আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০২২
ট্রাফিক আইল্যান্ডেও ঘুমিয়েছেন অভিনেতা মাসুম আজিজ
দর্শক ফোরামের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

অভিনেতা ও নাট্যকার মাসুম আজিজ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে মৃত্যু হয় তার। গুণী এ অভিনেতার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমেছে শোবিজ অঙ্গনে।

এই অভিনেতা গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় তাকে। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্যানসার শনাক্ত হয় তার। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাসুম আজিজ।

কিছুদিন আগে ব্যক্তিজীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছিলেন এই অভিনেতা। এ সময় ঢাকায় আসার পরে কতটা সংগ্রাম করেছেন সেই কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা মাসুম আজিজ মারা গেছেন

সে সময় তিনি বলেছিলেন, “ঢাকায় এসে বহুদিন এখানে-সেখানে, এমনকি আরামবাগের ট্রাফিক আইল্যান্ডের ওপরেও ঘুমিয়েছি। এমন অনেক কষ্ট করে জীবনকে তৈরি করা আমার।”

“আমি তখন খেতে পাই না, খুব খারাপ অবস্থা ঢাকা শহরে। চাকরি করব না। অনেক ভালো ভালো চাকরি করি নাই। ঢাকার বাইরে পোস্টিং, আমি যাব না। আমি ঢাকায় থাকব, থিয়েটার করব। মাথায় তখন থিয়েটার ছাড়া কিছু নাই। তখন হেঁটে হেঁটে আমি রামপুরা থেকে টিএসসি যেতাম, সেখানে রিহার্সেল শেষ করে আবার হেঁটে হেঁটে আসতাম। এসে সামনে একটা দোকান ছিল, সেখান থেকে বাকিতে চাল ও আলু নিতাম। রাতের বেলা রান্না হতো। ওই খাবারই খেতাম। অল্প খাবার রেখে পরেরদিন খেয়ে আবার বের হয়ে যেতাম।”

দোকান থেকে বাকি নেয়ার বিষয়ে এই অভিনেতা আরও বলেছিলেন, “এই দোকানদার বাকি দেয় কিন্তু কখনো বলে না, টাকা দাও। একসময় দেখি অনেক লজ্জার ব্যাপার, অনেক টাকা লোন। তারপর ওই দোকান থেকে আমি আর খাই না। এরপর একদিন ওই দোকানদার আমায় ডেকে বলে, ‘স্যার, আপনার কি হয়েছে? অনেক টাকা কামাই হয় এখন?’ আমি বলি, না তো। তারপর বলেন (দোকানদার), ‘তাহলে আমার এখানে খান (খাওয়া) না কেন?’ আমি বলি, আর কত ভাই, একটা ছোট দোকান। আর অন্য দোকানে ফ্রিজ আছে, আপনি রাখেন না কেন? তিনি বলেন, ‘আমার বেশি পুঁজি নাই।’ ওই দোকান থেকে সিগারেট থেকে শুরু করে সবই নেই আমি। যখন আমি একটা কাজ পেলাম, বেশ ভালো বেতনের চাকরি। এসি রুম, গাড়ি দেয়। হঠাৎ করে সুখ।”

জয়ী সম্মাননা পেলেন বাঁধন ও মেহজাবিন

“চাকরি থেকে প্রথম মাসের বেতন পাওয়ার পরে অফিস থেকে সরাসরি স্টেডিয়াম মার্কেটে চলে যাই। সেখান থেকে ছোট একটি ফ্রিজ নিয়ে ফিরি আমি। বাসার সামনেই ছিল দোকানটা। দোকানে গিয়ে বলি, এটা (ফ্রিজ) রাখেন। এটা আপনার জন্য। কারণ সব দোকানে ফ্রিজ রয়েছে, আপনার নেই। এটা হয় না। তিনি বলেন, ‘স্যার এটা…’। আমি বলি, অনেক খাওয়াইছেন। আপনি আমার জন্য যা করেছেন, এই একটা ফ্রিজ তার মূল্য হয় না। এরপর ওই দোকানদারের বকেয়া সব টাকা পরিশোধ করি”।

মেস লাইফের কষ্টের কথাও জানিয়েছিলেন এই অভিনেতা। তিনি বলেছিলেন, “মেসে টাকা দিতে পারিনি বলে আমার ব্যাগ আটকেছিল কাজের বুয়া। মেস থেকে বের হয়ে আসার সময় আমার কাছে এক টাকাও ছিল না। তখন বলে যে, ব্যাগটা রেখে যান। আমি ব্যাগটা রেখে শুধু এক প্যান্ট-শার্ট পরে বের হয়েছি।”

সংসার জীবনে সন্তানের দুধ কিনতেও অনেক অর্থ কষ্ট করতে হয়েছে এই তারকাকে। এই বিষয়ে তিনি সেই সময় বলেছিলেন, “আমি তখন জাফর সিদ্দিকির রুমে গিয়ে বসতাম। তার কাজ করে দিতাম। তিনি সৎ লোক। টেল অফে নাম না গেলে টাকা দিতে পারেন না তিনি। অর্থাৎ, অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে, কিছু কাজ করতে হবে। তারপরে টাকা দেবেন। তাছাড়া ওখানে খেটে মরলেও টাকা পাওয়া যায় না। তিনি একদিন আমাকে বলেন, ‘মাসুম, আপনার তো কপাল খুলেছে। কাল আপনার একটি অনুষ্ঠান আছে। পাঁচটায় চলে আইসেন, পাঁচশ টাকার একটি চেক পাবেন। আমি তখন সেই খুশি। তখন বাসায় আসি।”

“বাসায় আসার পরে কত স্বপ্ন। স্ত্রীকে তখন বলি, এই টাকা পেলে একবেলা গোশত খাব। সন্তানের দুধের টাকাও হয়ে যাবে। পরেরদিন যথারীতি কস্টিউম নিয়ে গেলাম। যাওয়ার পরে জাফর সিদ্দিকি আমাকে বলছে, ‘মাসুম সরি। কাজটা হচ্ছে না।’ আমি বলি কেন? তিনি বলেন, ‘ওমুক ভাই আপনার সঙ্গে কাজটি করবেন না। তিনি কোনো নতুন শিল্পীর সঙ্গে কাজ করবেন না।’ আমি বসে রইলাম রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। কারণ তখন আমার মাথায় আসছে না, বাসায় কি নিয়ে যাব আমি? রাতে যে গল্প করেছি বাসায়, এখন আমি বাসায় গিয়ে কী বলব? পরে রাতে বাসায় যাই, যাতে বুঝতে পারে কাজটি আমি করেছি। বাসায় (স্ত্রী) খুব খুশি। জিজ্ঞেস করে, ‘কী, কেমন হয়েছে?’ আমি বলি ভালো। তখনো এ ঘটনা তাকে (স্ত্রী) বলিনি। পরের দিন সকাল বেলা বলি। আমাকে কিছুই বলল না। চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়েছিল।”

মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বেশ খ্যাতি রয়েছে অভিনেতা মাসুম আজিজের। ১৯৮৫ সালে টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এরপর চার শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন এই গুণী অভিনেতা।

‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে রাইসুল ইসলাম আসাদের সঙ্গে যুগ্মভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মাসুম আজিজ। ‘গহীনে শব্দ’, ‘এই তো প্রেম’, ‘গাড়িওয়ালা’সহ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়া সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘সনাতন গল্প’ পরিচালনা করেছেন তিনি। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৮ সালে।

শিল্পকলার বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একুশে পদক লাভ করেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

এ বিভাগের আরো খবর

২১ জুন-23 অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান