গত ৮ আগস্ট ভোররাত ৩ থেকে ৬টার মধ্যে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণের পর খুন করা হয় এক তরুণী চিকিৎসককে। ওই তরুণীর গলার একটি হাড় ভাঙা ছিল। তাই প্রাথমিক ধারণা, গলা টিপে হত্যা করা হয় তাকে। শরীরের নানা স্থানে ক্ষত পাওয়া গেছে। এরপরই ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন শহর।
এই ঘটনায় সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সরব হয়েছেন কলকাতার তারকারা। অপরাধীদের শাস্তি ও বিচারের দাবিতে রাজপথেও নেমেছেন অনেকে। এদিকে টালিউড অভিনেতা ও বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষকে আটক করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। আর জি করকান্ডের প্রতিবাদে রাজপথে নামায় তাকে আটক করা হয়। ক্ষোভ ও প্রতিবাদে এবার সরব হয়েছেন বলিউড তারকারা।
অভিনেত্রী কারিনা কাপুর খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেছেন, সময় বয়ে যায়। কিন্তু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের প্রসঙ্গও টেনে আনলেন তিনি। কারিনা লিখেছেন, ‘১২ বছর পরেও একই ঘটনা। একই প্রতিবাদ। কিন্তু আমরা এখনও পরিবর্তনের অপেক্ষা করে চলেছি।’
প্রীতি জিন্টা নারীদের সুরক্ষার দাবি করেছেন তার পোস্টে। তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘অর্থনীতিতে সারা বিশ্বে আমাদের দেশ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। আগামী নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছাপিয়ে যাবেন নারীরা, এমনই মনে করা হচ্ছে। সময় হয়েছে যে নারীদের নিরাপত্তাকেই সবার আগে রাখতে হবে। খারাপ লাগে যখন দেখি, গ্রেফতারের পরে একজন ধর্ষকের মুখ ঢাকা থাকে। কিন্তু নির্যাতিতার ছবি ও নাম সব প্রকাশ্যে আনা হয়।’
হৃত্বিক রোশন তার এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “সমাজ হিসেবে আমাদের এবার বদলাতে হবে যাতে সবাই সেখানে নিরাপদ অনুভব করেন। কিন্তু এতে বহু সময় লেগে যাচ্ছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের সঠিকভাবে মানুষ করলেই আশা করছি এই বদল আসবে। আমরা ঠিক পারব। কিন্তু এখন আপাতত এই ঘটনার দ্রুত বিচার চাই। আর সেই শাস্তি এতটাই কঠিন এবং দৃষ্টান্তমূলক হতে হবে, যাতে অপরাধীরা আর এই কাজ করার কথা না ভাবে। আমি নির্যাতিতার পরিবারের পাশে রইলাম, ওদের মেয়ের ন্যায় বিচার চাই।”
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে আলিয়া ভাট লেখেন, “আরও একটা ধর্ষণ, বুঝলাম মেয়েরা কোথাও সুরক্ষিত নয়। এক দশক আগে নিভয়াকান্ড নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। আবার একই ঘটনা, কিছুই বদলায়নি। আমরা কীভাবে আমাদের কর্মস্থলে যাব? এই চিন্তা মাথায় ঘুরছে। এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নারীদের সুরক্ষা আসলে তাদের নিজেদের হাতেই তুলে নিতে হবে।”
আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা। প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি লিখেছেন, “এবার আপনার অজুহাত কী হবে? এবারও কী তার দোষ? কারণ পুরুষরা তো পুরুষ হবে, তাই না?”
এই ঘটনায় সোনাক্ষী সিনহা বলেন, “আর জি কর মেডিকেল কলেজের এই ঘটনাটি এখন আর শুধু ডাক্তারদের সমস্যা নয়। একবার ভাবুন, একটা নারী যদি নিজের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না থাকেন, তাহলে এর শেষ কোথায়? কিছু নেতারা বলেছিলেন, মেয়েদের রাতে বেরনো উচিত নয়। কিন্তু সেই মেয়েটির যদি নাইট ডিউটি থাকে, তাহলে? সে কি সেখানেও নিরাপদ? এই ঘটনা যেকোনো সময়ে যে কারো ক্ষেত্রে যেকোনো জায়গায় ঘটতে পারে। এই মানসিক বিকারগ্রস্ত অপরাধীকে কঠোরতম শাস্তি দিয়ে প্রকৃত উদাহরণ তৈরি করুন।”
অভিনেত্রী টুইঙ্কল খান্না লিখেছেন, ‘পঞ্চাশটা বছর এই পৃথিবীতে, এই দেশে কাটিয়ে ফেললাম। আমি আমার মেয়েকে ঠিক সেগুলোই শেখাচ্ছি, যেগুলো আমিও ছোটবেলায় শিখেছি। একা পার্কে যেও না, স্কুলে যেও না, সমুদ্রের ধারেকাছেও যেও না। একা কোনো পুরুষের সঙ্গে কোথাও যেও না। তিনি যদি তোমার কাকু, ভাইয়ের বন্ধুও হয়, তবুও না। সকাল-সন্ধ্যা কখনো একা কোথাও যেও না। বিশেষ করে রাতে তো একদমই না। কখন যাবে, এটার চেয়েও বড় বিষয় হলো একা যদি তুমি কোথাও যাও, ফিরে না-ও আসতে পারো।’
প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলিউডের তরুণ প্রজন্মের তারকারাও। সুহানা খান, নব্যা নভেলি নন্দা দাবি জানান, স্কুল, কলেজ এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের সঠিক নিরাপত্তা দিতে হবে।
You must be logged in to post a comment.