সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৪ অপরাহ্ন

চরকিতে (১৮‍+) ঘোষণা দিয়ে ইঙ্গিত টিকিটে

বিনোদন প্রতিবেদক / ১১২ জন দেখেছেন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪
চরকিতে (১৮‍+) ঘোষণা দিয়ে ইঙ্গিত টিকিটে
দর্শক ফোরামের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

সম্প্রতি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি নিয়ে এসেছে নতুন ওয়েব সিরিজ ‘টিকিট’। লেখক নাজিম উদ্দিনের গল্প অবলম্বনে ভিকি জাহেদ পরিচালনা করেছেন সিরিজটি। ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে কাজ করায় সুখ্যাতি আছে ভিকি জাহেদের। চরকি বলছে, এটি একটি থ্রিলার–কমেডি। এর গল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘রাতের বাসযাত্রায় টাকার লোভে লটারির প্রথম পুরস্কার জেতা সহযাত্রীকে খুন করে ফেলে দুই বন্ধু সালেক-আতাবর। এই লটারি টিকিটের লোভে জড়াতে থাকে বাসের অন্য যাত্রীরা। শুরু হয় একের পর এক বিশৃঙ্খলা। শেষ পর্যন্ত লটারির টিকিটই নির্ধারণ করবে, কারা হবে বিশৃঙ্খলার বলি এবং কে জিতবে পুরস্কার?’

এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই দেখা শুরু হলো ৬ পর্বের ‘টিকিট’। শুরুর দৃশ্যের ধাওয়ার কথা আগেই বলেছি। এর পর ধারাবাহিকভাবে কিছু ঘটনা দেখানো হয়। স্বীকার করতেই হবে, সেই দৃশ্যগুলো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন। তবে হ্যাঁ, মৌলিক নয়। এ ধরনের দৃশ্য বিদেশি কনটেন্ট দেখায় পটু চোখ আগেও দেখেছে। তবে এ দেশে সেটি নতুন। প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট হিসেবে (১৮‍+) ঘোষণা দিয়ে অবশ্য সেই ইঙ্গিত কিছুটা দেওয়াও ছিল। এবং এর জন্য পরিচালকের সাহসের প্রশংসা করতেই হয়।

প্রথম পর্বেই সিরিজের মূল ঘটনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর মধ্যে যৌন আবেদন বা এমএলএম ব্যবসায় ধরা খাওয়ার মতো আলোচিত বা বিতর্কিত, কিন্তু বাস্তব বিষয়গুলো বেশ সাবলীলভাবেই উঠে এসেছে। কোথাও আরোপিত মনে হয়নি। প্রথম পর্বেই ভূমিকা শেষ করে ফেলার পর, সেই ধারাবাহিকতাতেই বাকি পর্বগুলো এগিয়ে যায়।

একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, প্রয়োজন অনুযায়ী পর্বের দৈর্ঘ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘টিকিট’–এ। ফলে গল্প টেনে লম্বা করার প্রবণতা তেমন একটা সহ্য করতে হয়নি। শুরুর দিকটায় থ্রিলারের বদলে কমেডির রসই বেশি পাওয়া গেছে। মাঝের পর্বগুলোতে তা ধীরে ধীরে থ্রিলারে রূপ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তবে দুটি বিষয়ের সাম্যাবস্থাজনিত যুগপৎ সহাবস্থান সেভাবে ফুটে ওঠেনি। ফলে কমেডি থেকে থ্রিলে পৌঁছানোর রূপান্তরটি সবসময় একেবারে সূচারুরূপে হয়নি। আবার থ্রিল বা মিস্ট্রি ঢোকানোর মরিয়া উপায় হিসেবে হুট করে অতিপ্রাকৃত ঘটনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সমস্যা হলো, ভূত-জ্বিনের নাম মুখে নিলেই যে সবসময় তা উপযুক্ত রোমাঞ্চ যোগ করে—বিষয়টি তেমন নয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় আবহও সৃষ্টি করতে হয়। থাকতে হয় গল্পের সঙ্গে সাযুজ্য। সেটি না হলে মনে হয় উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কিছু!

তবে হ্যাঁ, ‘টিকিট’-এর স্টোরিটেলিংয়ে নতুনত্ব আছে। যেভাবে গল্পের উপসংহার টানা হয়েছে, তা বেশ চিত্তাকর্ষক। দেশীয় কনটেন্টের বিচারে এতে ভিন্নতা যে আছে, সেটি মানতেই হবে। যদিও চিত্রনাট্য ও দৃশ্যায়ন পুরোপুরি নিখুঁত নয়। যেমন: যদি সিরিজে দেখানো বাসটির প্রসঙ্গেই আসি, তবে বলতেই হয়, যাত্রীদের হাতে যে ধরনের ঝাঁ চকচকে টিকিট পাওয়া গেছে, তা লক্করঝক্কর বাসের চেহারার সঙ্গে ঠিক মেলে না। ঠিক তেমনিভাবে গল্পে দেখানো চরিত্রের সকল কর্মকাণ্ডের কারণ চরিত্রের মুখ দিয়ে বলানোরও কোনো প্রয়োজন নেই। বরং গল্পের প্রবাহ ছন্দময় হলে, তা আপনা আপনিই ফুটে ওঠে।

অবশ্য ‘টিকিট’-এর অভিনয়শিল্পীরা খুবই পরিণত অভিনয় করেছেন। সালেকরূপী সিয়াম আহমেদ ও আতাবরের চরিত্রে মনোজ প্রামাণিক দুর্দান্ত ছিলেন। পর্দায় বেশ ভালো উপস্থিতি ছিল সুবর্ণা হিসেবে সাফা কবিরের। জয়রাজের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। তাঁর অভিনয়ে খুঁত খুঁজে পাওয়া কঠিন। আবদুল্লাহ আল সেন্টু, মাহমুদ আলম, এ.কে. আজাদ সেতু প্রত্যেকেই যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন।

তবে পরিচালকের একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সেটি হলো, যেকোনো ভিজ্যুয়াল কনটেন্টে থাকা সব চরিত্রই সমান মূল্য বহন করে থাকে। সেখানে প্রধান চরিত্রে যারা থাকেন, তাদের পাশাপাশি পর্দায় ৫ সেকেন্ড স্থায়ী চরিত্রেও নিখুঁত অভিনয় প্রয়োজন হয়। সেটি অসাধারণ না হলেও ত্রুটিমুক্ত হওয়া জরুরি। কিন্তু এই বিষয়টির অভাব ভিকি জাহেদের ‘টিকিট’-এ প্রচণ্ডভাবেই ছিল।

সবশেষে আসা যাক শিরোনামে উল্লিখিত প্রশ্নে। উত্তর হলো, কাটতেই পারেন। ‘টিকিট’ দেখলে সময় একেবারে নষ্ট হবে না। একটা ভিন্ন ধরনের গল্প দর্শকদের সামনে হাজির করেছেন পরিচালক ভিকি জাহেদ। অভিনয়শিল্পীরাও চেষ্টা করেছেন বেশ। সেটিকে সম্মান জানানোই উচিত। সুতরাং, প্রত্যাশার পারদ আকাশে না তুলে ‘টিকিট’ দেখাই যায়। তাতে দর্শকেরা বরং কিছুটা ভিন্ন স্বাদই পাবেন।
বাসের যাত্রী তাঁরা
বাসের যাত্রী তাঁরা। ছবি: চরকি
রেটিং: ৩.৮/৫
পরিচালক: ভিকি জাহেদ
গল্প: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
চিত্রনাট্য: ভিকি জাহেদ
অভিনয়শিল্পী: সিয়াম আহমেদ, সাফা কবির, মনোজ প্রামাণিক, আবদুল্লাহ আল সেন্টু, মাহমুদ আলম, জয়রাজ, বাদল শহিদ, এ কে আজাদ সেতু প্রমুখ
ভাষা: বাংলা
ধরন: ক্রাইম, কমেডি, থ্রিলার
মুক্তি: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪/ চরকি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

এ বিভাগের আরো খবর

২১ জুন-23 অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান