কাতার বিশ্বকাপে নকআউট পর্বের ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে লড়ছে মরক্কো। শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা স্পেন ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করলেও আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় মরক্কো। তবে, দুই দলের কেউই গোল করতে না পারায় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয় ০-০ গোলে। ম্যাচের ফল বের করার জন্য অতিরিক্ত আরও ৩০ মিনিট খেলা হলেও সেখানেও গোল করতে ব্যর্থ হয় এই দুই দল। ফলে, ম্যাচের জয়ী নির্ধারণ করার জন্য ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
গোলরক্ষকের বীরত্বে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে মরক্কো। আর গোলরক্ষকের বীরত্বে স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে মরক্কো।
কোস্টারিকাকে সাত গোল দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল স্পেন। এরপর আর সেই স্পেনকে পাওয়া যায়নি। চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই শেষে ড্র, এরপর জাপানের বিপক্ষে বসল হেরেই। সেই স্পেন আজকের ম্যাচের শুরুতেই ৭০ শতাংশের কাছাকাছি সময় নিয়ে রেখেছিল বলের নিয়ন্ত্রণ। বল দখল মোটে ২০ ভাগের একটু বেশি হলেও মরক্কোর ফুটবলাররা বিভ্রান্ত হননি। যথেষ্ট পরিণত ফুটবলই খেলেছেন দলটি।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘড়ির কাটা যতই এগিয়ে যাচ্ছিল, কোচ লুইস এনরিকে কপালের চিন্তার ভাঁজ তখন ক্রমেই বাড়ছিল। এনরিকে গাভির বদলে মোরাতাকে নামান। ৭০-৭৫ মিনিটের মধ্যে তিন পরিবর্তন করেন। শেষ পনের মিনিট ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা যথেষ্ট চেপে ধরেছিল আফ্রিকান দলকে। মরক্কোর দলটি যে সহজে ভেঙে পড়ার নয়, সেটা তখন প্রমাণিত হয়েছে আরও এক বার।
পাঁচ মিনিট ইনজুরি সময় দারুণ ফুটবল হয়েছে। মরক্কো গোলের সুযোগ পেয়েছিল। ফিনিশিং ব্যর্থতায় আর গোলটি হয়নি। ইনজুরি সময় শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে বক্সের একটু বাইরে ফ্রি কিক পায় স্পেন। সেই ফ্রি কিকে স্পেন গোল পেয়েই যাচ্ছিল। বল গোললাইন অতিক্রম করার আগ মুহর্তে মরক্কোকান গোলরক্ষক হাত ছোঁয়ান। শেষ মিনিটে দুইটি কর্নার আদায় করে স্পেন। মরক্কোর ডিফেন্ডারদের দক্ষতায় অবশ্য সফল হয়নি একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
প্রথমার্ধে ম্যাচের প্রথম আক্রমণ করেছিল মরক্কো। ম্যাচের ১২ মিনিটে ডি বক্সের সামান্য সামনে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। কিন্তু আশরাফ হাকিমির নেওয়া কিক উপর দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের ২৫ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল স্পেনের ফেরান তোরেস। তার নেওয়া শট মরোক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু ধরতে পারেননি। কিন্তু বল গিয়ে বারে লেগে ফিরে আসে। যদিও সেটাতে আবার শট নেন দানি আলমো। কিন্তু ততক্ষণে অফসাইডের বাঁশি বাজায় রেফারি।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে মরোক্কোর মাজরাউই বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন। তার নেওয়া শট সরাসরি স্পেনের গোলরক্ষক ইউনাই সিমনের কাছে যায়। তিনি সেটা রুখে দেন। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ০-০ গোল নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতি থেকে ফিরে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ফেরান তোরেস। কিন্তু তার নেওয়া শট ডানকোণা থেকে ধরে ফেলেন মরোক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু। ম্যাচের ৮২ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন স্পেনের আলভারো মোরাতা। কিন্তু সেই সুযোগেও গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় স্পেন।
৮৬ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। আচরাফ হাকিমির ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে ওয়ালিদ ছেদেরিয়া বল পেয়ে কোনোরকমে ডান পায়ে শট নেন। কিন্তু সেই শট থেকে গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় তারা।
গতকাল ক্রোয়েশিয়া-জাপান ম্যাচের মতো আজকের এই ম্যাচও গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে মরক্কো দারুণ এক আক্রমণ রচনা করে। স্পেন রক্ষণ পরাস্ত হওয়া সেই আক্রমণ অফসাইডে বাতিল হয়। স্পেন অতিরিক্ত সময়েও বল দখল নিজেদের পায়েই রেখেছিল। পুরো ম্যাচে ৮০০ পাস খেলেছে এনরিকের দল, তবে পায়নি কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা। ১০৪ মিনিটে দুর্দান্ত এক আক্রমণ রচনা করে মরক্কো। ডিফেন্স চেরা পাসে স্পেনের দুই ডিফেন্ডার পরাস্ত। মরক্কোর ফরোয়ার্ডের প্লেসিং কোনো মতো পা দিয়ে ঠেকান স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গোলের সুযোগ পেয়েছিল। মরক্কোর আক্রমণগুলো কিছু ক্ষেত্রে নষ্ট নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে। অন্য দিকে স্পেন এই অর্ধে গোল না পাওয়ার জন্য ভাগ্যকেও দুষতে পারে। ১২০ মিনিট শেষ তিন মিনিট ইনজুরি সময় ছিল। সেই ইনজুরি সময়ে স্পেনের আক্রমণ একটি সাইড পোস্টে লেগে বাইরে যায়। ভাগ্য সঙ্গ দিয়েছে মরক্কোকেও। এর এক মিনিট আগে যে স্পেনের আক্রমণ ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রায় আত্মঘাতী গোল হজম করেই বসেছিল দলটি, ভাগ্য সঙ্গ না দিলে কি আর সেখান থেকে বেঁচে ফেরা যেত?
You must be logged in to post a comment.