মানুষকে হাসানোর মন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন পৃথিবীতে। সবইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন কৌতুকশিল্পী রাজু শ্রীবাস্তব। তাঁর অসামান্য কৌতুক বোধ এবং স্বভাবজাত প্রাণখোলা মেজাজের জন্য আট থেকে আশি সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। মাত্র ৫৮ বছর বয়সে তাঁর অসময়ে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না কেউই।
গত প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রাজু। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দিল্লির এইমস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। মাঝে পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়ে উঠলেও আচমকাই চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেছিলেন রাজু। জ্ঞানও ফিরে এসেছিল তাঁর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন পরিবারের সদস্য থেকে অনুরাগীরা।
কৌতুক অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তব মারা গেছেন
কিন্তু নিয়তি অন্য কিছুই লিখে রেখেছিল রাজুর জন্য। বুধবার সকাল ১০ টা ২০ নাগাদ প্রখ্যাত কৌতুকশিল্পীর মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছাতে যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেষ সকলে। তারকা থেকে শুরু করে আমজনতা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শোকবার্তা দিয়েছেন।
দেশের সবথেকে জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পীদের মধ্যে একজন ছিলেন রাজু শ্রীবাস্তব। মৃত্যুর পর মানুষের তাঁর সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরো বেড়ে গিয়েছে। উত্তর প্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা ছিলেন রাজু। তবে জেনে অবাক হবেন, রাজু কিন্তু তাঁর আসল নাম ছিল না। তাঁর ভাল নাম ছিল সত্য প্রকাশ শ্রীবাস্তব।
কানপুরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৬৩ সালে জন্ম নেওয়া ছেলেটি নিজের শিল্পসত্ত্বার জেরে বলিউডে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। একের পর এক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও হার মানেননি তিনি। ছোটবেলায় যখন সকলে বড় হয়ে চিকিৎসক, আইনজীবী বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, সেখানে রাজু ঠিক করে নিয়েছিলেন তিনি কৌতুকশিল্পী হবেন। ছোট থেকেই মিমিক্রিতে তুখোড় ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে করতেন অভিনয়ও। মাধুরী ও অনিলের ‘তেজাব’ ছবির হাত ধরে বলিউডে পা রেখেছিলেন রাজু।
৩ দশক পর কাশ্মীরে খুললো সিনেমা হল
পরবর্তীকালে শেখর সুমনের ‘দেখ ভাই দেখ’ শো, ‘শক্তিমান’, ‘বাজিগর’, ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’, ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হুঁ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজু শ্রীবাস্তব। অংশ নিয়েছিলেন ‘নাচ বলিয়ে ৬’এও। কমেডি নাইটস উইথ কপিল, মজাক মজাক মে, লাফ্টার চ্যালেঞ্জের মতো জনপ্রিয় কিছু শোয়ে সঞ্চালনার মধ্যে দিয়ে এক্কেবারে আমজনতার ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়েছিলেন।
রাজু একবার কুখ্যাত ডন দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে কৌতুক করায় খুনের হুমকি পেয়েছিলেন পাকিস্তান থেকে। পরিবারের সদস্য, এমনকি তাঁর সেক্রেটারিকেও প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন রাজু শ্রীবাস্তব।
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজুর রাজনীতিও একসময় দেশবাসীর চর্চার বিষয় ছিল । ২০১৪ লোকসভার ভোটে রাজু কানপুর থেকে সমাজবাদী পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। আবার সেই বছরই দল বদলে ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যপদগ্রহণ করেন রাজু।
অত্যন্ত প্রতিভাবান রাজু এক সময় দেশের সবথেকে ‘দামী’ কৌতুকশিল্পী ছিলেন। সূত্রের খবর মানলে, প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি রেখে গেলেন তিনি। স্টেজ শোয়ের পাশাপাশি সঞ্চালনা, বিজ্ঞাপন, রিয়েলিটি শো থেকেও উপার্জন করতেন রাজু। কানপুরে একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর। ৮২ লাখ টাকার অডি এবং ৪৭ লাখ টাকার বিএমডব্লিউ রয়েছে রাজুর কাছে। সুত্র বাংলাহান্ট
উল্লেখ্য, গত ১০ই অগাস্ট বুধবার জিমে শরীরচর্চা করার সময়েই অসুস্থ বোধ করেন। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার হার্ট অ্যাটাকের কথা প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকে অভিনেতাকে সুস্থ করে তোলার জন্য চিকিৎসকেরা নানান উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন । অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিও করার পর প্রাথমিক অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও দিনকয়েক পরেই রাজুর শরীরে ফের একাধিক সমস্যা ধরা পড়ে। একই সঙ্গে জ্বর ও সংক্রমণের সমস্যাতেও কাহিল হয়ে পড়ে এই বিখ্যাত কমেডিয়ান।
You must be logged in to post a comment.