বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মুক্তি পেয়েছে ‘মিশন হান্টডাউন’

ফোরাম প্রতিবেদক / ১১১ জন দেখেছেন
আপডেট : জুন ৩০, ২০২৩
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মুক্তি পেয়েছে ‘মিশন হান্টডাউন’
দর্শক ফোরামের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

সিরিজের প্রথম দৃশ্যেই খুনের সংকেত। এর পরের দৃশ্যে চলে এল থানা-পুলিশের চক্কর। এক নারী তার নিখোঁজ স্বামীর খবর বের করতে হাজির হয় পুলিশের কাছে। আর তার বিস্তারিত শুনেই গলদঘর্ম পুলিশ কর্মকর্তা। সেখান থেকেই শুরু হয়ে গেল ‘মিশন হান্টডাউন’।

শুরু তো হলো। থ্রিলার সিরিজের শুরু হিসেবে বেশ নিখুঁতও তা। কিন্তু ১০ পর্ব ও প্রায় ২০০ মিনিট ধরে যে মিশন হান্টডাউন চলল, তা আসলেই কি আপে থাকল, নাকি নামতে নামতে ডাউনে? চলুন সেই উত্তরই খোঁজা যাক এবার।

ঈদের আগের দিন ‘মিশন হান্টডাউন’ মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ। এর গল্প সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘এটিএস অফিসার মাহিদ বাংলাদেশ তোলপাড় করা এক সন্ত্রাস গোষ্ঠীর সদস্যদের ধাওয়া করা শুরু করলে তার সাক্ষাৎ হয় সেই গোষ্ঠীরই এক অপরাধীর স্ত্রীর সাথে। সন্ত্রাসগোষ্ঠী আর অপরাধ দমনের লক্ষ্যে মাহিদের যুদ্ধে নীরা কি ফিরে পাবে তার আপনজনকে?’

উল্লেখ্য যে, অপরাধীর স্ত্রীর চরিত্রটি নীরার। তার সঙ্গে মিশে যায় এটিএস অফিসার মাহিদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত এজেন্ডা। সন্ত্রাসীদের আক্রমণে স্ত্রী হারানো মাহিদ সব সময়ই খুঁজে ফেরে হত্যাকারীদের। অন্যদিকে নীরা চরিত্রটি শুরু থেকেই নিখোঁজ স্বামীর খোঁজে থাকা অসহায় স্ত্রীর প্রতিবিম্ব হয়ে ছিল। সব মিলিয়ে গল্পের শুরুর জন্য প্লটটি খারাপ ছিল না। সমস্যা হলো, গল্পের প্রবাহমানতায়। লোকাল বাসের মতো লক্কর-ঝক্কর গতিতে এগিয়েছে গল্প। এর এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের যে মিথষ্ক্রিয়া, সেটিও একেবারেই নিখুঁত ছিল না। ফলে চিত্রনাট্যও ঠিক জুৎসই হয়নি।

মিশন হান্টডাউন আসলে কপ স্টোরি। ফলে পুলিশবাহিনীর কর্মকাণ্ড কিছুটা উদার দৃষ্টিভঙ্গিতেই তুলে ধরার কথা। সেটি হয়েছেও বটে। কিন্তু সমস্যা হলো, তাল ও লয়ে ভারসাম্যহীনতা। লজিক্যাল কনক্লুশনেও ঘাটতি ব্যাপক।

এ প্রসঙ্গে কিছু বিষয় তুলে ধরা যাক বরং। এগুলোর বিচার-বিবেচনার ভার আপনাদের ওপরই রইল।

১. বুকের বাঁ পাশে গুলি লাগলে শুধু কি সন্ত্রাসীরাই মারা যান? পুলিশ কর্মকর্তার বুকের বাঁ পাশে গুলি লাগার পরও কি তাঁর উঠে দাঁড়িয়ে আততায়ীর হেলমেট খোলার ক্ষমতা থাকে?

২. কাঁদলে চোখ থেকে জল পড়ে। এটি চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেই জল কীভাবে গাল বেয়ে টেবিলে রাখা হাতের ওপর টপটপ করে পড়ে?

৩. কেউ কি তাঁর ভিজিটিং কার্ডের পেছনে কল মি লিখে গাড়িতে জমিয়ে রাখে সবাইকে তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়ার জন্য?

৪. আততায়ীর টার্গেট মিস করিয়ে দেওয়ার জন্য কেন বারবার বন্দুকের সামনে মাইক্রোবাস এসে হাজির হয়?

৫. সশস্ত্র পুলিশের কাছে বন্দুক থাকবেই। কিন্তু কেউ কি সর্ব অবস্থায় কোমরের পেছনে পিস্তল গুঁজে ঘোরে?

এটুকুতেই থামি বরং। চাইলে এমন আরও অনেক প্রশ্ন তুলে আনা যাবে ‘মিশন হান্টডাউন’ থেকে। বেশি গভীরে আর না যাই। মোদ্দা কথা হলো, কপ স্টোরিতেও কিছু যুক্তি ও গল্পের পরম্পরা মেনে চলতে হয়। কিন্তু মিশন হান্টডাউনে সেসব মানার বালাই নেই। সিরিজটির গল্পের গাঁথুনি দুর্বল, তা তো আগেই বলেছি। ফলে সেই অনুযায়ী চরিত্রগুলোও ঘেঁটে গেছে। তার ওপর সিরিজটি তৈরি হয়েছে টিভি নাটক বা টেলিফিল্মের আদলে, ওটিটির যে চরিত্র তা একেবারেই অনুপস্থিত। কিন্তু এর মাঝেই আনা হয়েছে সিনেমার আবহে কিছু অতিনাটকীয়তা, সেগুলো আর মেশেনি ঠিকঠাক। এসব কারণে ১০ পর্বের সিরিজটি শুধু দৈর্ঘ্যেই লম্বা হয়েছে, উপভোগে নয়। গল্প কিছু ক্ষেত্রে অহেতুক টানা হয়েছে। হয়তো সেটি টান টান করলে ১০০ থেকে ১২০ মিনিটেই শেষ হতে পারত সিরিজটি।

তাই বলে কি সানি সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদের পরিচালনায় তৈরি ‘মিশন হান্টডাউন’-এ ভালো কিছুই নেই? আছে। মূল পুলিশ কর্মকর্তা মাহিদের ভূমিকায় এফ এস নাঈম যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। সিরিজের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত নীরারূপী বিদ্যা সিনহা মিমের তেমন কিছুই করার ছিল না। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন মিম তাঁর অভিনয়শিল্পীর সত্তা বের করে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। নিজ চরিত্রে সমু চৌধুরী মানানসই ছিলেন। তবে আলাদা করে নজর কেড়েছেন জয়রাজ ও এ কে আজাদ সেতু। তাঁরা সত্যিই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। শুধু এ দুজনকে নিয়েই আলাদা আলাদা গল্প তৈরি হওয়া উচিত ওটিটিতে। তাহলে হয়তো আরও আকর্ষণীয় কনটেন্ট পাওয়া যেতে পারে ভবিষ্যতে।

সিরিজের ইন্ট্রো দুর্দান্ত। গ্রাফিকস ও মিউজিকের মিশেল বেশ ভালো। আবহসংগীতের কথা আলাদাভাবে ভালো বলতেই হয়। ক্যামেরার কাজও নজরকাড়া। বিশেষ করে যেসব ড্রোন শটে পুরো শহর দেখা গেছে, সেগুলো সত্যিই নান্দনিক। এ ছাড়া সিরিজের শেষের শুরুতে যে চমক আনা হয়েছে, সেটিও খারাপ লাগেনি। তবে এ ধরনের চমক আনার ক্ষেত্রে বেশ বিলম্ব যে হয়েছে, তা স্বীকার করতেই হবে।

‘মিশন হান্টডাউন’ একটি সার্থক সিরিজ হতেই পারত। কিন্তু তা আটকে গেছে দুর্বল চিত্রনাট্য এবং তার আরও দুর্বল চিত্রায়নে। এই সিরিজে রহস্যের জাল ভেদ করে অপরাধীকে চিহ্নিত করার তাড়া নেই। তবে অপরাধীকে চেজ করার বিষয়টি আছে, আর তার কারণেই মূলত এটি থ্রিলার। কিন্তু শুধু গাড়ির হার্ড ব্রেক বা কিছু গুলি ছোড়া দিয়ে দর্শকদের এই থ্রিল ফিল করানো যায় না। এর জন্য একটি নিখুঁত আবহ তৈরির প্রয়োজন হয়। সেটিরই অভাব ছিল মিশন হান্টডাউনে। এসব বিষয় সামলানো গেলেই কিন্তু সিরিজটি উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারত।

ঈদের সময়টায় আমাদের হাতে অবসর থাকে বেশ কিছুটা। সে সময়টায় ফাঁক পেলে দেখে ফেলতেই পারেন ‘মিশন হান্টডাউন’। এই রিভিউয়ে লেখা পর্যবেক্ষণগুলো তখন মিলিয়ে নেবেন না হয়!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

এ বিভাগের আরো খবর

২১ জুন-23 অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান