বুধবার (১৩ মার্চ) মারা গেছেন কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও সুরকার সাদি মহম্মদ। তিনি নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদের বড় ভাই এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মোহাম্মদ সলিমউল্লাহর পুত্র। সাদির মৃত্যুতে শুধু সংগীতাঙ্গন নয়, পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনজুড়ে শোকের মাতম।
গুণী এই শিল্পীর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন অনুরাগী থেকে শুরু করে সংগীত, চলচ্চিত্র, নাট্যাঙ্গনের তারকারা।
নজরুলসংগীতশিল্পী সুজিত মুস্তাফা লিখেছেন, ‘সাদি মোহাম্মদ ভাই বা আমাদের প্রিয় সাদি ভাই, কাজটা একদম ঠিক করলেন না। আপনাকে কত মানুষ ভালোবাসে আপনি জানেন? আমাকে যতটা ভালোবাসা দিয়েছেন হয়তো বুঝতে পারেননি আপনাকে আমি তার চেয়েও বেশি ভালবাসতাম। আপনিতো জানেন এখানে অভিমানের দাম নেই, তাই অভিমান করা তো বোকামি বৈ আর কিছু নয়। ওপারে ভালো থাকুন সাদি ভাই, আমাদের ভালোবাসায় থাকুন।’
সাদি মহম্মদের স্মরণে কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী লিখেছেন, ‘কী শুনলাম! সাদি ভাই নেই! সবসময় ভালো ব্যবহারে আর কথার মিষ্টতায় মন খুশি করে রাখতেন সবার সাথে, দেখা হলেই। সে মানুষটি চলে গেলেন না ফেরার দেশে স্বেচ্ছামৃত্যুতে! এমন কোনো সময় সেভাবে দেখিনি, যেখানে অনেক কিছু চাই তাঁর, সম্মানটুকু ছাড়া! খুব সাধারণ একজন অভিমানী শিল্পী।
শিল্পীর অভিমান তো থাকবেই, সেটাই তাঁর বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অভিমান করে শুধু কষ্টই বাড়ে, বাড়ে বিষন্নতা! সে বিষয়টা তিনি হয়তো মানতে পারেননি। বহুবার বলেছি অভিমান করেন না। কিন্তু একাকী অভিমানের ওজন এতোটাই হয়তো বেড়ে গিয়েছিল, পারলেন না আর সেই দৌড়ে নিজেকে বাঁচাতে! আত্মহননের পথ বেছে নিলেন! কেন? অভিমান, কষ্ট থেকে পরিত্রাণের এ পথ তো বেছে নেওয়া ঠিক হল না সাদি ভাই! হারালাম আমরা দরদী কণ্ঠের সাদি মহম্মদকে যাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ভিন্ন এক মাত্রা পেয়েছিল। খুব সচেতন হয়ে গান গাইতেন। গান গাইতেন ভালোবেসে। আমাকে সুমাকে খুব ভালোবাসতেন। সাদি ভাই, অনেক কান্না পাচ্ছে আপনার চলে যাওয়ায়! আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
সংগীতশিল্পী মহিতোষ তালুকদার তাপস লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় সাদি ভাই আর নেই! উনি কিছুক্ষণ আগে দেহ রেখেছেন! ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের মিটিং প্লেস ছিল। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিমউল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।
একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়ির সেজ ছেলে সাদি মহম্মদ তকিউল্লাহর আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদি-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিম উল্লাহকে।
সাদি ভাই, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার পরিবারের অবদানের কথা জাতি কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ রাখবে। আমাদের ছোট্ট বাসায় আপনার এক দুপুরের গান-আড্ডার সুখস্মৃতি আজীবন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করব।
সাদি ভাই, আপনি ভালো থাকুন আনন্দলোকে। আপনি ভালো থাকুন অমৃতলোকে। আপনি ভালো থাকুন সুরালোকে। আপনি ভালো থাকুন অনন্তলোকে। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই আপনাকে প্রিয় সাদী ভাই।’
সাদি মহম্মদের একটি ছবি পোস্ট করে অভিনেতা রওনক হাসান লিখেছেন, ‘আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
অভিনেত্রী-নির্মাতা অরুনা বিশ্বাস লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় সাদি মহম্মদ ভাই কী এমন তাড়া ছিল? ভালো থাকবেন অনন্তলোকে।’
প্রিয় শিল্পীর মৃত্যুতে তাঁরা ছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন কবির বকুল, শতাব্দী ওয়াদুদ, পান্থ কানাই, চয়নিকা চৌধুরী, তিশমা, রুনা খান, শরাফ আহমেদ জীবন, স্বাধীন খসরু, অণিমা রায়, এলিনা শাম্মী প্রমুখ।
You must be logged in to post a comment.